পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৪২৮

সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। তবে বাংলাদেশের সমস্যাবলী নিয়ে বিশ্বের দুটি রাষ্ট্র অর্থাৎ আমেরিকা ও ফ্রান্স অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তাঁকে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো যে পাকিস্তানকে আরও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা হবে না। কিন্তু পরবর্তী কালে দেখা গেল, যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানে আরও ছ’সাত জাহাজ বোঝাই অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে। ফ্রান্স সরাসরি পাকিস্তানকে অস্ত্রশস্ত্র না পাঠালেও, সেখানে খোলাবাজারে পাকিস্তানের জনগনের কাছে অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক (অরফ - চধশরংঃধহ) কমিটি সাহায্য দেওয়া বন্ধ রাখলেও, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বলে পাকিস্তান সাহায্য পেতে থাকবেই।

 এখন ভারতের প্রায় ৭০ লক্ষ শরণার্থী এসেছে বাংলদেশ থেকে। অদূরভবিষ্যতে এই সংখ্যা এক কোটিতে দাঁড়াবে। পাকিস্তান এমন একটা কৌশল অবলম্বন করতে চাইছে যার ফলে এদেশে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধে। এ ব্যাপারে ভারতকে সতর্ক থাকতে হবে। যদি ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেধে যায়, তাহলে পাকিস্তানের হাত বাংলাদেশে আরও শক্ত হবে এবং পরিণামে বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধদের সংগ্রাম বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। কিছুকাল আগে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তাকে বলেছিলেন সময় এলেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এখন প্রশ্ন হলো, সে সময় আসবে কবে? বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করা হলে, ভারতের সমস্যাবলী আরও জটিল হয়ে পড়বে। অথচ, এটা ঠিক যে একদিন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতেই হবে। বাংলাদেশকে এক্ষুনি স্বীকৃতি না দিলে আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। আর সারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শান্তি বিঘ্নিত ও বিপন্ন হবে। এ জন্য যদি যুদ্ধ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, আমাদের অবশ্যই যুদ্ধ করতে হবে।

 বিহার রাজ্য বাংলাদেশ সম্মেলন সমিতির ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজ্যপাল শ্রী দেবকান্ত বড়ুয়া।

 শ্রী বড়ুয়া বলেন যে, ভারত পাকিস্তানের একনায়কতন্ত্রের বিরোধী। আজ বাংলাদেশে যে কায়দায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হচ্ছে, ঠিক সে কায়দায় একদিন হিটলার বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিলেন। কিন্তু ইতিহাস এই সাক্ষ্য বহন করেছে যে, পাশবিক কার্যাবলী কখনই পরিণামে টিকে থাকে না। এর অন্যথা হলে, হিটলার অবশ্যই চূড়ান্ত পর্যায়ে সফলকাম হতেন।

 তিনি আরও বলেন যে, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের ও দুর্গত শরণার্থীদের সাহায্য দেওয়ার জন্য এ পর্যন্ত বিহারের জনগণ ২৭ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছে। এ দেখেই বুঝা যায় বিহারের আপামর জনসাধারণ বাংলাদেশের এই মুক্তি সংগ্রাম সম্পর্কে কী সহানুভূতিশীল মনোভাব গ্রহণ করেছেন। বিহারের অধিবাসীগণ বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করার এক কর্মসূচী নিয়েছেন।

 সারা ভারত এস, এস, পি, দলের সভাপতি শ্রী কর্পূরী ঠাকুরও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধদের সমর্থনে ভাষণ দেন।

 বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ এ, কে, মল্লিক বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনে বিহারের জনগণ যে ভূমিকা গ্রহন করেছেন তা কোনদিনই বাংলাদেশের মানুষ ভুলবে না। তিনি আরও বলেন যে বাংলাদেশের মানুষ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার চেয়েছিল পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন পাকিস্তান হয়ে যেতে চায়নি। স্বায়ত্তশাসনের যে দাবী বাংলাদেশের মানুষরা করেছিলেন, সেই অপরাধে ২৫শে মার্চের মধ্য রাত্র থেকে পাকিস্তানী সামরিক চক্র নিরস্ত্র ও নিরীহ জনসাধারণের ওপর হত্যার অভিযান শুরু করে দেয় এবং এই হত্যাকাণ্ডই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ নামে এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। বালাদেশে বাঙ্গালী হিন্দুদের মধ্যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ যে কৌশল অবলম্বন করেছেন, তার মূল রক্ষ্য হল ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বানচাল করে দেওয়া। এ সম্পর্কে ভারতের জনগণকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।