পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৪৩৮
শিরোনাম সূত্র তারিখ
শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে কোলকাতায় বিরাট সমাবেশ দৈনিক আনন্দবাজার’ ৮ আগষ্ট, ১৯৭১

বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবীঃ

শত-সহস্র কণ্ঠ মুখরিত আকাশে বাতাসে ওঠে রণি

(স্টাফ রিপোর্টার)

 কলকাতা, ৭ই আগষ্ট-শনিবার মুজিবুর দিবসে ময়দানে শিল্পী-সাহিত্যিকদের সমাবেশে শত-সহস্র কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু মুজিবুরের মুক্তি এবং মানবতাবিরোধী ইয়াহিয়া চক্রের বিচারের দাবী সোচ্চার হয়ে ওঠে। বিশাল এই জনসমাবেশের অনুষ্ঠানসূচী ছিল ছোট্ট। মুজিবের মুক্তি দাবি সম্বলিত প্রস্তাব পাঠ করলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ

 ৭ আগষ্টের পুণ্যদিনে সমবেত শ্রেণী — মত - ভাষা নির্বিশেষে সর্বরূপ শিল্প সাহিত্যের স্রষ্টা, কর্মী ও অনুরাগীবৃন্দের এই সমাবেশ বিশ্বের সমস্ত জনগণ আর ছোট - বড় সমস্ত শক্তির দরবারে এই ব্যগ্র উৎকণ্ঠিত দাবিটি পৌঁছে দিতে চায় যে, পাকিস্তানের নরহত্যা শাসকদের গুমঘর থেকে বঙ্গবন্ধু মুজিববুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্ত করে না আনলে ভবিষ্যতের কাছে আজকের জগৎ কখনও মুখ দেখাতে পারবেনা -তাই, আমরা চাই মুজিবুর রহমানের প্রাণহননের উদ্যত পাকিস্তানী জল্লাদদের হাত বিশ্ব মানবের হস্তক্ষেপে স্তব্ধ হোক, অভিশাপে পাথর হোক, আমরা চাই অবিলম্বে নিঃশর্তে বঙ্গবন্ধু মুজিবের মুক্তি। এই বলে আমরা সারা দুনিয়াকে হুশিয়ার করতে চাই, যে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার ছলনা করে যে বিশ্বাসহন্তার দল সারা বাংলাদেশকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে, লেলিহান আগুনে পুড়িয়ে দিতে কোটি কোটি মানুষকে দেশছাড়া, গৃহহারা, স্বজনহারা নিঃসম্বল করতে একটুও দ্বিধা করেনি - তারা মুজিবুর রহমানের প্রাণ যে কোনো মুহূর্তে, যে কোন ছুতোয় হরণ করতে পারে। যার পৈশাচিকতাকে বল্গাহীন করে মানুষ নামে কলঙ্ক লেপন করেছে, বাংরাদেশেরতাদেরন বিশ্বাস করা পাপ।

 এই সমাবেশ মনে করে, পাকিস্তানের বর্তমান শাসকচক্র আর তার সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ঘৃণ্য রাজনৈতিক কুচক্রীর দল মানবতাকে হত্যা করার জঘন্যতম অপরাধে অপরাধী।

 এই সমাবেশ মনে করে, পাকিস্তানের শাসকেরা তাদের হীন স্বার্থের যূপকাষ্ঠে শুধু বাংলাদেশকেই বলি দেয়নি, সেই সঙ্গে সমগ্র পাকিস্তানের জনগনকেও চোখ বেঁধে বধ্যভূমির দিকে নিয়ে চলেছে। আমরা আশা করি, পাকিস্তানের শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী শুভ বুদ্ধিমান সমস্ত মানুষ যেভাবেই হোক তাদের শাসকচক্রকে প্রতিরোধ করার জন্য স্বদেশবাসীর চোখ খুলে দেওয়া এবং মুক্তির সংগ্রামে উদ্বুব্ধ করার জন্য সাহসে বুক বেঁধে দাঁড়াবেন।

 এই সমাবেশ একবাক্যে দাবি করছে, বঙ্গবন্ধু মুজিবের মুক্তি এবং মানববিরোধী ইয়াহিয়া চক্রের বিচার। শিল্প সাহিত্য জগতের এই সমাবেশ এদেশের অন্যান্য কাজে নিয়োজিত শহরের ও গ্রামের বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, শ্রমিক-কর্মচারী, কৃষিজীবী এবং শ্রমজীবী সবাইকে আহবান জানাচ্ছে যে, বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে বাঁচাবার জন্যে যে যেখানে আছেন এগিয়ে আসুন। মৃত্যু আর অন্ধকারের শক্তিকে আমরা কিছুতেই কোন খানেই জয় হতে দেবনা। জীবনের আর নতুন সৃষ্টির জয় হবেই।

 সংগীত পরিবেশন করলেন দ্বিজেন মুখার্জী, অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপলা সেন প্রমুখ শিল্পীরা। ধ্বনিত হলো মুজিবের বিনা শর্তে মুক্তি চাই বিচার প্রহসন মানি না।