পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৪৬৯
শিরোনাম সূত্র তারিখ
দিল্লীর আন্তজার্তিক সম্মেলনে বাংলাদেশের মুক্তির জন্য সশস্ত্র বিশ্ববাহিনী গঠনের আহ্বা‌ন দৈনিক ‘যুগান্তর’ ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

দিল্লী সম্মেলনে

বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গঠনের প্রস্তাব

(বিশেষ সংবাদদাতা)

 নয়াদিল্লী, ১৮সেপ্টেম্বর- আজ এখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন দিনে মুক্তিবাহিনীর হাতে হাত মিলিয়ে জংগীশাহীর বিরুদ্ধে লড়াই-এর জন্য একটি আন্তর্জাতিক বিগ্রেড গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়। সর্বোদয় নেতা শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণ ও নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী বি. পি কৈরালা এ প্রস্তাব করেন।

 শ্রী কৈরালা বলেন, প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসবে না। ফরাসী সাহিত্যিক আঁদ্রে মালরোর অভিমত সমর্পণ করে তিনি বলেন যে, এই সময় বাংলাদেশের জনগন সবচেয়ে জরুরী যা দরকার, তা হচ্ছে কার্যকর সাহায্য। শ্রী মালরো সম্প্রতি এক চিঠিতে বাংলাদেশে সামরিক কমাণ্ড-এর ভার নিতে চেয়েছেন। শ্রী কৈরালা বলেন যে, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ব্যর্থ হলে বিশ্বের এই অংশের সমস্ত মানুষের মুক্তি সংগ্রামও ব্যর্থ হবে।

 এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সমবেত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশিষ্ট নাগরিকরা বাংলাদেশের ব্যাপক নরহত্যার তীব্র নিন্দা করেন এবং সেখানকার মানুষের আত্ম নিয়ন্ত্রণ অধিকার সমর্থন করেন। তারা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে আধুনিক ইতিহাসে এই হত্যাকাণ্ডের আর কোন তুলনা নেই।

  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানানো হয়।

 সম্মেলনে গৃহীত এক সর্বসম্মত প্রস্তাবে মুজিবুরের গোপন বিচারের নিন্দা করা হয় এবং এর থেকে বিরত রাখতে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ্বের রাষ্ট্রগোষ্ঠীয় কাছে আবেদন জানানো হয়। প্রতিনিধিরা সবাই দাঁড়িয়ে উঠে প্রস্তাবের প্রতি তাদের সমর্থন জানান।

 বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্য রক্ষায় যারা জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে দু’মিনিট নীরবতা পালন করে সম্মেলনের সূচনা করা হয়।

 ২৪টি দেশের প্রতিনিধিরা উদ্বোধনী অধিবেশনের উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সর্বোদয় নেতা শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণ।

 স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় যেমন করা হয়েছিল, বাংলাদেশের মুক্তির জন্য সে রকম একটা সশস্ত্র আন্তর্জাতিক বিগ্রেড গড়ে তোলার প্রশ্ন ভেবে দেখতে সর্বোদয় নেতা জয় প্রকাশজী আজ আহ্বা‌ন জানান।

 তিনি মনে করেন, প্রতিটি পাকিস্তানী সৈন্য বাংলাদেশ থেকে সরে না গেলে এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত শরণার্থী দেশে ফিরে যাবে না।