পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৫২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8እ›® বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ বাংলাদেশ ও ভারতের ভবিষ্যৎ-জয়া প্রকাশ কম্পাস ২৭ নভেম্বর ও ৪ ডিসেম্বর, নারায়ণ লিখিত নিবন্ধ Ֆի, ԳՖ বাংলাদেশ বাংলাদেশ ও ভারতের ভবিষ্যৎ জয়প্রকাশ নারায়ণ বর্ষার অবসান হতেই ক্ষমতাসীন নেতৃবর্গ সোচ্চার হয়ে উঠেছেন এবং রীতিমত কলরব শুরু করেছেন। সবচেয়ে সামরিক ঢং-এর কলরব করেছেন আমাদের সুযোগ্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী। কিন্তু এর দ্বারা তিনি এদেশের জনসাধারণের বুদ্ধির অবমাননা করেছেন আর নিজেকেও পৃথিবীর লোকের কাছে হাস্যস্পদ করে তুলেছেন। দরকার নাও হতে পারে। জেনারেল ইয়াহিয়া খান উপলব্দি করতে শুরু করেছেন বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনী তাদের প্রাধান্য স্থাপন করে চলেছে আর বিশ্বের মতামতও ক্রমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সবচেয়ে বিচিত্র উক্তি হল-“মুক্তি বাহিনী আর একটি মুষ্ঠাঘাত করলেই বাংলাদেশ মুক্তি হয়ে যাবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে শ্রী জগজীবন রাম নিশ্চয়ই অন্যের চাইতে ভাল জানেন। তিনি জানেন বাংলাদেশে গেরিলারা কত সামান্য হাতিয়ার নিয়ে লড়ছে-তাদের নিয়মিত সংগ্রাম করার বাহিনী কত ছোট, আগ্নেয়াস্ত্রে তাদের কী শোচনীয় স্বল্পতা রয়েছে, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র এবং ভারী সামরিক সরঞ্জাম তাদের প্রায় কিছুই নেই। এত সামান্য অস্ত্রশক্তি এবং অর্ধশিক্ষা নিয়ে তারা বাংলাদেশে পাকিস্তানের পাঁচ ডিভিসন সৈন্যকে ঘায়েল করতে পারবে এ রকম আশা করা মানে অতিবড় মূখের স্বর্গে বাস করা। আরও খারাপ কথা হল- এ দেশের জনসাধারণ যাদের ভাগ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ভাগ্য অবিচ্ছেদ্যরূপে বাঁধা হয়ে গেছে, এ ধরনের উক্তি তাদের শোচনীয়রূপে বিভ্রান্ত করবে। আজ যখন জনগণের মধ্যে এরূপ মানসিকতা সৃষ্টি করা জরুরী প্রয়োজন যাতে ংগ্রামী চেতনায় তারা শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে পারে, নিজেদের মধ্যেকার সবরকম ভেদাভেদ ভুলে যেতে পারে, কর্মের প্রতিক্ষেত্রে সর্বাদিক উদ্যম নিয়ে আত্মনিয়োগ করতে হবে, জাতীয় স্বার্থকে এক ভয়ানক বিপদ থেকে রক্ষা করবার জন্য যে কোন প্রকার ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হতে হবে, তখন কেউ নয় স্বয়ং প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই মারাত্মক আত্ম-সন্তুষ্টির মধ্যে জগৎকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে চাইছেন, যে বিনা সাহায্যে ংলাদেশের সৈন্যরাই কাজ খতম করে দিতে পারবে। একথা অবশ্যই সত্য বাংলাদেশের মুক্তির জন্য বাংলাদেশের লোকদেরই লড়াই করতে হবে। কিন্তু যেহেতু বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা সাহসী, সংকল্পবদ্ধ এবং অনন্যনিষ্ঠ, সেইহেতু তারা নিজেরাই পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে এ ধরনের কথা বলে আমাদের নিজেদেরকে এবং বিশ্ববাসীকে প্রতারণা করা নিরর্থক। তাদের সাহায্যে কাউকে আসতে হবে। ভারত ছাড়া সে ক্ষমতা এবং উদ্বেগ আর কার আছে? এটা যদি কেবল আর্ত প্রতিবেশীকে সাহায্য করার প্রশ্ন হত তাহলে এ যুগের জাতি-রাষ্ট্রের অনৈতিক নৈরাশ্যকর ও হৃদয়হীন রীতি অনুসরণ করে নিজের দোরগোড়ার বাইরেই লুটতরাজ, নারীধর্ষণ ও বিধ্বংসী কার্যকলাপ সম্পর্কে চোখ বুজে থাকলেও হয়ত ভারতের পক্ষে তা যুক্তিযুক্ত হত। আমাদের বিবেককে বাঁচাবার জন্য আমরা কানে তুলো দিয়েও থাকতে পারতাম যাতে বাংলাদেশে পাকিস্তানী সৈন্যদের পাপালয়ে বন্দী হতভাগিনী বাঙালি তরুণীদের হৃদয়ভেদী নৈশ আর্তনাদ আমাদের শুনতে না হয়। বাংলাদেশের লোকেদর হিন্দুপ্রবণ সংস্কৃতি ধবংস করে, কি করে খাঁটি মুসলমান হতে হয় তা তাদের শিক্ষা দিয়ে বাংলাদেশে একটি