পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৫২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bbr বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খন্ড ঝঙ্কৃত শব্দে তাঁর বক্তৃতার উপসংহার টেনে প্রধানমন্ত্রী বললেন- বিশ্ব যদি এ অবস্থায় বসে থাকে তাহলে আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য এবং আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন কাঠামোকে বাঁচানো এবং পরিপুষ্ট করার জন্য বাধ্য হয়েই প্রয়োজনমত সমস্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করব। বাংলাদেশ প্রশ্নে দেশের মৌলিক স্বার্থ কিভাবে জড়িয়ে আছে এর চেয়ে স্পষ্টতার ভাষ্য এবং যে কোন অবস্থায় দেশ রক্ষা ও দেশের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে সর্বাধিক ব্যবস্থা অবলম্বন সম্পর্কে পৃথিবীকে এর চেয়ে পরিষ্কার ও শক্ত হুশিয়ারী আর কিছু হতে পারে না। আজ পাঁচ মাস পরে এই কথাগুলো কত অসার মনে হয়। এই পাঁচ মাসে আমাদের অবস্থা তো কেবলই ঘোরালো হয়েছে। কাজ করার যখন কোন ইচ্ছাই ছিল না তখন এ ধরনের বীরত্বব্যঞ্জক উক্তি করার কি প্রয়োজন ছিল। কথা এবং কাজের এই ব্যবধানই পৃথিবীতে এই দেশের মর্যাদা মারাত্মকরূপে ক্ষুন্ন করেছে, দেশের নেতাদের সম্পর্কে লোকে আস্থাহীন হয়ে পড়েছে। কথা-কথা-কথা কিন্তু কোন কাজ নয়, এর একটি মারাত্মক পরিণাম হল দেশের মধ্যে দিব্বি নিশ্চিন্তার ভাব ছড়িয়ে পড়েছে, সম্ভাব্য পাকিস্তানী দুষ্কর্মের মোকাবেলা করার মত কোন মানসিক প্রস্তাব নেই। স্বাধীন ভারতের এই সাংঘাতিক সংকটে জাতীয় নেতৃত্বের এর চেয়ে চূড়ান্ত ব্যর্থতা কল্পনা করা কঠিন। তাঁর সংযম ও রাষ্ট্ৰীক বিচক্ষণতার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য রাশি রাশি সুপারিশপত্র পাচ্ছেন, কিন্তু তাতে এই দেশ যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বোঝার চাপে আর্তনাদ করছে তা বিন্দুমাত্র হাল্কা হয়নি এবং জাতির অস্তিত্ব যেভাবে বিপন্ন হয়েছে তাকেও ঠেকানো যায়নি। মাসের পর মাস আন্তর্জাতিক স্তরে রাজনৈতিক সমাধানের খোঁজ চলছে, কিন্তু তার এই মাত্র ফল হয়েছে ইয়াহিয়া খান বন্ধু-বান্ধব সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং তাঁর পথ হতে সরে দাঁড়াতে অস্বীকার করেছেন। তা তিনি করতেই পারেন, তাঁর একাধিক শক্তিশালী বন্ধু আছে। আসলে বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের চাবিকাঠি কেবল ভারতের হাতেই আছে। আমি এর আগেও বলেছি স্বাধীনতা ছাড়া কোন রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়। সুতরাং যার জীবন-মরণের প্রশ্ন বাংলাদেশের প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত সেই ভারতকেই রাজনৈতিক সমাধানের এই নিস্ফল সন্ধান বন্ধ করতে হবে এবং সাহস করে বাংলাদেশ ও তার ন্যায়সঙ্গত সরকারকে স্বীকার করে শক্ত হাতে প্রশ্নটিকে চিরদিনের মতো মোকাবেলা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সইে উপযুক্ত কথাই বারবার বলে চলেছেন। ইতিহাস প্রমাণ করবে তিনি ইতিমধ্যেই এ রকম কয়েকটি উপযুক্ত মুহুর্ত হারিয়েছেন। সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ছিল এপ্রিলের প্রথম পক্ষে, যখন বাংলাদেশের নেতৃবর্গ ও মুক্তিযোদ্ধাগণ সাহায্যের জন্য চীৎকার করেছিলেন, যখন তাঁরা তাঁদের সরকারও প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিলেন এবং তাঁদের বক্তব্য পেশ করার জন্য সাহায্যের আশায় দিল্লী ছুটে যাচ্ছিলেন। তখন যদি আমরা সাড়া দিতাম তাহলে পৃথিবীতে যা কিছু শোভন, নীতিসম্মত ও মানসিক তা আমাদের দিকে আসত। তখন আমরা যেতাম বন্ধুদের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যকারীর ভূমিকা নিয়ে, আক্রমণকারীর ভূমিকা নিয়ে নয়- আর এই সাহায্যের জন্য বারবার অনুরোধ আসছিল বাংলাদেশের সঙ্গত ও সংবিধানিক সরকারের কাছ থেকে, যে সরকারকে জন কয়েক মীরজাফর বাদে সকলেই পূর্ণ সমর্থন করেন। অথচ সেই সুযোগ আমরা বৃথায় যেতে দিয়েছি যে সুযোগ কোন জাতির জীবনে একশ বছরে একবার আসে। তখনকার এই নিক্রিয়তার জন্য ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর বদনাম দেওয়া হচ্ছে। আমাদের বীর জোয়ান ও তাদের সুযোগ্য অফিসারদরে সম্পর্কে এর চেয়ে অধিক অশোভন আর কিছু হতে পারে না। সৈন্যবাহিনীর অপ্রস্তুতি নয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতাই এই জন্য দায়ী-আপাতকালের জন্য বিকল্প পরিকল্পনা তাঁরা দিতে পারেননি। গোপন হলেও এখন একথা প্রায় সকলেই জানে ঢাকাস্থিত আমাদের ডেপুটি হাইকমিশন বারবার সরকারকে সাবধান করেছিলেন যে মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা আলেয়া ছাড়া কিছু নয়, পাকিস্তান পূর্ব সীমান্তে সৈন্যসংখ্যা