পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৫৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৫8 বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খন্ড সরকারের রাজনৈতিক সমাধানের অর্থ কি এটিই? আর আমি জানতে চাচ্ছি এই ‘পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট’ শব্দটি কখন থেকে এসেছে? স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশ্নে পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট শব্দটির ব্যবহার প্রথমে ভারত সরকার করেছে, না রাশিয়া, আমেরিকা বা বৃটেন এটি আবিষ্কার করেছে? পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট শব্দটি এরূপ অস্পষ্ট ও অনিশ্চিত যে এর একটি অর্থ বেরিয়ে আসতে পারে। একটি অর্থ আওয়ামী লীগের ৬ দফা পরিকল্পনায় পৌছতে পারে। এও হতে পারে যে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক রূপে উভয়ের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে এজন্য আমি খোলামনে প্রথমে জানতে চাই যে ভারতের সরকারী দফতরে রাজনৈতিক সমাধানের কি ব্যাখ্যা রয়েছে? সরকারের মনোভাব ও একজন ভারতীয় নাগরিকের মনোভাব বি অভিন্ন? স্বাধীন বাংলাদেশের ব্যাপারে আমাদের পরিষ্কার মনোভাব হচ্ছে- সেখানে সম্পূর্ণভাবে বিদেশী শক্তি, আজ যারা সেখানে অবস্থান করেছে, সমস্ত শক্তি সরিয়ে নেবে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ স্বাধীন ও স্বতন্ত্ররূপে আপন অস্তিত্বে টিকে থাকবে। দু'জন সোশ্যালিষ্ট আছেন। একজন ইন্দিরা গান্ধী, অপরজন বৃটিশ লেবার পার্টি। উভয় সোশ্যালিষ্ট আজ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বতন্ত্র দাবী রাখার প্রয়াসী। আমি সর্দার শরণ সিং- এর কাছে জানতে চাই, আপনি কেন বিদেশে যান? কি বুঝাবার আছে তাদেরকে? ভারত সরকার অপেক্ষা কেউ কম জানে না। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ আছে যে, আজ স্বাধীন বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা অবহিত নয়? স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পকে সকলে খবর রাখে। জাতীয় স্বার্থেই সকল দেশ নিজেদের কথা ভাববে। তাহলে আমাদের জাতীয় স্বার্থ কি? আমি বিদেশ মন্ত্রী মহাদয়ের কাছে জানতে চাই, ভারত সরকার রাষ্ট্ৰীয় কল্যাণার্থে কি ভাবছেন? স্বাধীন বাংলাদেশ টিকে থাকা না তার লুপ্ত হওয়া ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পক্ষে? আমি প্রথমে এটিই দেখতে চাই যে, ভারতের রাষ্ট্ৰীয় কল্যাণ ভারত সরকার কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন? এই সাথে আমি এও বলতে চাই, যারা কমনওয়েলথ কমনওয়েলথ বলে চীৎকার করছেন (আমি আগাগোড়াই যার বিরোধী ছিলাম) যতক্ষণ কমনওয়েলথ’র সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের স্বাধীন বিদেশ নীতি হবে না। আমার চোখের সামনে এখন এই পরিস্থিতি। এ সময় বৃটিশ সরকার যা কিছু করেছে, সর্দার শরণ সিংহ হুবহু এখানে ওইসব করার জন্য প্রস্তত রয়েছেন। সর্দার শরণ সিংহ: সম্পূর্ণ ভুল কথা আপনি বলেছেন। শ্রী রাজনারায়ণ ; আমি জানতে চাই, ভারত সরকার আজো এ কথা মানেন কি না যে, হিন্দুস্থান বিভক্ত হলো, এবং ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি হলো, এতে বৃটেন, রাশিয়া, আমেরিকা তিন দেশেরই চক্রান্ত ছিল। এটা ভিন্ন কথা যে, হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষের আশংকা বেড়েছিল, এটা ভিন্ন কথা যে মিঃ জিন্নাহ নাছোড় হয়েছিলেন এবং নেহেরুজি বৃদ্ধ বয়সে ক্ষমতালাভের জন্য প্রলুব্ধ হয়েছিলেন, এতদসত্ত্বেও রুশ, আমেরিকা ও বৃটেন এই ত্রিরাষ্ট্রই চাইতো ভারত এক বৃহৎ রাষ্ট্ররূপে যেন না থাকতে পারে এবং দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়, সুতরাং তারা কিভাবে মেনে নেবে যে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক যা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্টে সংঘটিত অস্বাভাবিক দেশ বিভাগের বিলুপ্ত ঘটাবে। এজন্য বৃটেন, রুশ, আমেরিকা, এরা সকলে চাইবে যে পাকিস্তানের সাহায্য লাভ অব্যাহত থাকে। বৃটেন স্পষ্টভাবে যা বলেছে আমাদের সর্দার শরণ সিংহ কি তাহ জানেন নাপাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ অর্থব্যবস্থাকে সে ধ্বংস হতে দেবে না? পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কাঠামো অটুট রাখার জন্য বৃটেন পূর্ণ প্রচেষ্টা চালাবে এ কথা পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে। অতএব, আমি জানতে চাই, এই সরকার, আজ স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পর্কে কি পরিকল্পনা মনে মনে পোষণ করেছেন? সর্দার শরণ সিংহ কোন রূপরেখা নিয়ে বিদেশে যাবেন? বিদেশী রাষ্ট্র প্রধানদের কি কথা বলবেন? এবং স্বাধীন বাংলাদেশে কোন ধরনের সেটেলমেন্ট করানোর জন্য উদ্যোগ নেবেন? উপ-সভাপতি : আপনার প্রশ্ন শেষ। শ্রী রাজনারায়ণ : আমি কমনা করি এবং বিদেশ মন্ত্রী মহোদয়কে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, তিনি যখন বিদেশে যাবেন তখন কি বলবেন যে বাংলাদেশ স্বাধীন।