পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৬৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՆԳՏ বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খন্ড নিজেরাই স্বাধীনতা যুদ্ধ করে নিজেদের বেশ স্বাধীন করবে, কিন্তু এই স্বাধীনতার দায়- দায়িত্ব পাকিস্তান ভারতের ওপর আরোপ করতে চাচ্ছে। পাকিস্তান ভারতের সংগে যুদ্ধ বাধাবার কোন ছুতো পাচ্ছে না। তার জন্য আপনারা কতদূর নিজের দিক রক্ষা করে চলবেন। এখন একটি পথ মাত্র খোলা আছে, মুক্তিযোদ্ধা যাতে পাকিস্তানে কোন এলাকা মুক্ত করতে না পারে, এটা এজন্য যে, ভারত তাকে সে এলাকা মুক্ত করে দিয়েছে এবং যেহেতু ভারত সে এলাকা মুক্ত করে দিয়েছে সেজন্য পাকিস্তান ভারতের সংগে যুদ্ধ করার পূর্ণ অধিকারী পাকিস্তান এই অজুহাত দেখাতে সক্ষম না হয়। আমি মনে করি এরূপ বিতর্কে নেমে আমরা নিজেদেরকেই প্রতারনা করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের প্রশ্ন আমাদের প্রতিবেশীর প্রশ্ন। বাংলাদেশের উদ্বাস্তু আজ ভারতের ভূ-খণ্ডে তারা কেন ভারতে এসেছে? বাংলাদেশের অন্য প্রান্তে, খুব কাছাকাছি, বার্মায় কেন ঢুকে পড়লো না, ভারতে কেন এল? এটি ইতিহাসের কথা যা বাংলাদেশের সংগে সংশ্লিষ্ট নয়, এটি পুরাতন ইতিহাস। এটি ১৯৪৭ সাল উত্তর ইতিহাস। পাকিস্তানের অত্যাচারে নিপীড়িত মানুষ ভারতে আসতো। বাংলাদেশের মানুষ অভিনব কিছু করেনি। পাকিস্তানী সৈন্যদের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে মুক্তিকামী মানুষ বাঁচার সহজ উপায় মনে করে ভারতে এসেছে। শ্রী চাগলা এখানে বলেছেন বাংলাদেশে প্রতি স্বীকৃতি, বাংলাদেশের স্বাধীনার ব্যাপারে সহানুভূতির অর্থই এই যে, পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তানের অংগ নিয়ে টিকে থাকবে না, পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানের বিলোপ ঘটে তবে আমাদের ভয় কিসের। যদি আমি একথা প্রথমেই বলতাম তাহলে আমাকে সাম্প্রদায়িক ও পাকিস্তান বিরোধী বলে অভিহিত করা হত কিন্তু এখানে এ সম্বন্ধে অনেক কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাব উত্থাপনকারী শ্রী প্ৰণব কুমার মুখাজী বলেছেন, বাংলাদেশের এই যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান পূর্ব বাংলা হতে প্রতিটি হিন্দুকে বের করে দেয়ার প্রয়াস নিচ্ছে। শ্রী চাগলা সরকারী হিসেবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ৭০ লক্ষ রিফিউজীর মধ্যে ৬৫ লক্ষ হিন্দু। আজ এই সত্য কথাটি বললেও সরকারের দিক হতে বলা হবে এই প্রশ্নকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না। সত্য ভাষণে সাম্প্রদায়িক মোড় আসে না। হয় আমরা যা ঘটছে তা থেকে নিজেদের চোখ ঢাকি, পাকিস্তানের অভিলাষ কি তা থেকেও আমরা দেশবাসীকে অন্ধকারে রাখি, নয়ত পাকিস্তান বাংলাদেশে কি করতে চায় তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের কোন মাথাব্যথাই থাকা উচিত নয়। আমাদের দেশে এই প্রশ্নকে আমরা একটি জাতীয় সমস্যা মনে করি। ...আজ পাকিস্তান সামরিক তৎপরতার মধ্যে বেছে বেছে প্রতিটি হিন্দুকে পূর্ব বাংলা হতে ভারতে বহিষ্কার করে দেয়ার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে যখন থেকে পাকিস্তান হয়েছে তখন হতে তার এই মনোভাব সক্রিয়। ভারত পাকিস্তান বিভাগের শর্তসমূহ ১৯৪৭ এর ১৪ ই আগষ্ট হতেই মুছে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তান কখনও তার তোয়াক্কা রাখেনি। পাকিস্তান এসব পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে এবং করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের বিপরীতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হ্রাস করতে হবে, ওই নীল নক্সার অন্তর্গত এই শেষোক্ত বিষয়টির বিষয়ক্রিয়া অধিকতর তীব্র। ইহা তাদের নীলনক্সা অনুযায়ী পূর্ণ হচ্ছে। আজ আমরা যদি উদ্বাস্তুদের এই বোঝা হতে আমাদের দেশকে মুক্ত করতে চাই তাহলে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এটা তারা নিজেরাই চাচ্ছে, আমরা নিজেদের পক্ষ হতে করছি না, এটা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের লোকেরই বলছে যারা নির্বাচনে বাংলাদেশে প্রায় ৯৮ ভাগ জনসমর্থন পেয়েছে। যে ক্ষমতাসীন দলের সরকার তাকে সেদলই নির্বাচনে নেমে জনগণের ভোট নেয় এটা আমরা দেখে আসছি কিন্তু মিলিটারী জান্তার অধীনে একটি বিরোধীদল ৯৮ ভাগ সমর্থন লাভ করে এটি পৃথিবীতে সম্ভবতঃ নজিরবিহীন আর এই প্রবল জনসমর্থন প্রাপ্ত হয়েছে বাংলাদেশে আজকের নবগঠিত সরকার। তারা আবেদন করেছে তাদেরকে স্বীকৃতি দিতে, তাদেরকে সাহায্য করতে। আমরা তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের মিত্রতালাভ করতে পারি, এই গণহত্যার ইতিহাস ওখানেই থামাতে পারি। গেরিলা যুদ্ধের দ্বারা তারা নিজেদের স্বাধীনতা অর্জনের একটি অন্তর্জালা অত্যাচার ঠেকাতে পারে না। যদি