পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৯২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brba বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খন্ড শ্রী জাগজীবন রামঃ শ্ৰী বাজপেয়ী বিমান দ্বারা আমাদের আকাশসীমা অতিক্রমের প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি সংবাদপত্রে দেখে থাকবেন যে, পাকিস্তানী বিমান প্রবেশ করার পর আমাদের antiaircraft guns চালানো হয়েছে। আমি সংসদের অন্য হাউস-এ বলেছিলাম আর এখানেও তা পুনরায় বলতে চাই যে, কোন পাকিস্তানী বিমান প্রবেশ করলেই তাকে ভূপাতিত করা হবে এই মর্মে আমাদের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। আমাদের সীমান্তে বিক্ষিপ্ত গোলাবর্ষণ হচ্ছে এ কথা স্বয়ং বলেছি। আমি এও বলেছি যে এক কোটি শরণার্থী এ দেশে পাঠিয়ে দেয়া একটা জঘন্য আক্রমণ। আমি এও বলেছি যে, আমাদে কে উস্কানী দেবার জন্য যত গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে আমরা তা নীরবে সহ্য করছি, কেননা আমরা সত্বরই এরূপ পরিস্থিতির মধ্যে আসতে চাই না যা এটি যুদ্ধের রূপ নেবে। আমি আগে বলেছি এবং দৃঢ়তার সঙ্গে তা আবার বলতে চাই যে, পাকিস্তানের একটি সৈন্যও যদি আমাদের সীমান্তের কাছে আসে তবে আমাদের সৈন্য তাকে তাড়িয়ে সীমান্তের ওপারে পৌছে দেবে। কিন্তু পাকিস্তানের এ আচরণ আমি এভাবে নিতে চাই না। আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার, লক্ষ্যও সুস্পষ্ট এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তও পরিচ্ছন্ন। এমনিতেই পাকিস্তানের একটি বিমানও যদি চলে আসে তবে আমরা তাকে হস্তক্ষেপ (interference) বা অনুপ্রবেশ (Intrusion) বলে উল্লেখ করে আক্রমন বলতে পারি। আমাদের সীমান্তের কাছে একটি গুলিও ছোড়া হলে আমারা তাতে আক্রমণ বলতে পারি, এবং আমরা তা বলেছিও। কিন্তু আমরা যে অর্থে আক্রমণের কথা বলেছি সেটি হলো এই যে, পাকিস্তানী ওপারে ছুড়ে দেবে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে এ ব্যাপারে কোন অনিশ্চয়তা নেই। আমরা সিদ্ধান্তহীনভাবে কাজ করছি না, বরং আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েই কাজ করছি। আমাদের আরও দৃঢ় বিশ্বাস, যেসব লোককে বাধ্যতামূলকভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হবে তাদেরকে নিজ দেশে ফিরে যেতেই হবে। তারা সেরূপ পরিস্থিতিতে যেতে পারে যখন তাদের এই আস্থা হবে যে তারা সম্মানের সঙ্গে নিরাপত্তার সঙ্গে যেতে পারবে। সেই অবস্থা কখন সৃষ্টি হবে তা আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধান শুধু তাই হতে পারে যা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে গ্রহণীয়। তাদের কাছে কোনটা গ্রহণীয় তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন এবং আমি আশা করি শ্রী বাজপেয়ী সেটি পড়েছেন। তারা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন যে, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থেকে কম কোন রাজনৈতিক সমাধান তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তারা এ কথারও পুনরুক্তি করেছেন যে, তারা বাংলাদেশে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠা করেই লোকদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিজেদের এই প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করেছেন। শ্রী বাজপেয়ী উল্লেখ করেছেন যে, পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা সেখানে পুনরায় নির্বাচন করিয়েছে। এটি বিশ্ব ইতিহাসের কোন নতুন ব্যাপার নয়। যখনই কোন সামরিক শাসনের শক্তি কমে আসে, যখন তাদের চেতনা হয় যে তাদের পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে, তখন তারা এই প্রকার শিখন্ডীদের আশ্রয় নিতে দ্বিধা করে না। এরূপ পরিস্থিতিতে বশংবদ মন্ত্রী সভা গঠন করা হয়, বিশ্ব ইতিহাসে এরূপ নজীর মেলে। ইতিহাসে এরূপ বশংবদ মন্ত্রী সভার যে পরিনতি হয়ে থাকে, বাংলাদেশে পাকিস্তানের সামরিক গোষ্ঠীর দ্বারা যে প্রয়াস নেয়া হয়েছে তার পরিণতিও একই হবে এতে আমার কোন সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারেও আমার কোন সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশের তরুণরা যারা নিজেদের মাতা-ভগ্নিদের অপমানিত হতে দেখেছেন, যারা নিকট আত্মীয়দেরকে নির্মমভাবে নিহত হতে দেখেছেন, বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতার কোন বিকল্প যে নেই, একথা তারা কখনো বিস্মৃত হতে পারবে না। সংসদকে আমার বলার এইই আছে। এর বেশি বলার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।