পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দলিল প্রসঙ্গ: পটভূমি-২

 এই খণ্ডে সংগৃহীত দলিলপত্রের কালসীমা ১৯৫৮ সনের ৭ অক্টোবর থেকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত।

 সামরিক আইন জারির পর থেকে ১৯৬২ সালের ৮ই জুন সামরিক আইনের অবসান পর্যন্ত সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ছিল। ফলে এই সময়ের দলিলপত্রে মুখ্যত সামরিক সরকারের বিভিন্ন ক্রিয়াকাণ্ডই প্রতিফলিত হয়, বিভিন্ন অধ্যাদেশ জারি, যথা-এবডো (১৬ পৃষ্ঠা), লেজিসলেটিভ পাওয়ার অর্ডার (২৮ পৃষ্ঠা), মৌলিক গণতন্ত্র আইন (৩০ পৃষ্ঠা), তার অধীন নির্বাচন সংক্রান্ত রিপোর্ট (৪৮-৬১ পৃষ্ঠা), শাসনতন্ত্র কমিশন রিপোর্ট (৭৭-১২৬ পৃষ্ঠা) এবং ১৯৬২ সনের শাসনতন্ত্র সংক্রান্ত সরকারী প্রতিবেদন (১৫৮-১৭২ পৃষ্ঠা)। এর সংগে রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার গ্রফতারের সংবাদ (২, ৩ পৃষ্ঠা), শহীদ দিবস পালনের প্রতি সরকারী মনাভাব (৬৩-৭০ পৃষ্ঠা), এবং ছাত্ররাজনীতির তৎকালীন পরিস্থিতি (১২৮ পৃষ্ঠা)।

 সরকারী কাগজপত্র থেকে সংগৃহীত একটি দলিল পূর্ব পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রণ্ট কর্তৃক স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত পরিকল্পনার একটি দলিল এই অংশে গৃহীত হয়েছে। তাছাড়া প্রেসিডেণ্ট আইয়ুব খান এবং জেনারেল আজম খানের ব্যক্তিগত পত্র বিনিময়ের মাধ্যমে পাকিস্তানী শাসকদের অন্তর্দ্বণ্ডের পরিচয় ফুটে উঠেছে (১৪৭-১৫৬ পৃষ্ঠা)।

 ১৯৬২ সনে সামরিক আইন অবসানের পরপরই তৎকালীন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলোদশের নতৃবৃন্দের প্রতিবাদ (১৭৩ পৃষ্ঠা) এবং বিভিন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় গণতান্ত্রীক ফ্রণ্ট প্রতিষ্ঠার দলিল সন্নিবেশিত হয়েছে ১৮৯ পৃষ্ঠায়। ১৯৬২ সনের শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রদেশব্যাপী হরতাল ও প্রতিবাদের দলিল সনিবেশিত হয়েছে ১৮৩-১৮৮ পৃষ্ঠায়।

 ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সন পর্যন্ত যেসব দলিল অন্তর্ভূক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সাইজ কমিশন রিপোর্ট (১৯৬-২১৫ পৃষ্ঠা), সরকার কর্তৃক সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ (২২০-২২২ পৃষ্ঠা), বাংলাদেশের জনসাধারণ কর্তৃক দাংগা প্রতিরোধ (২২৫ পৃষ্ঠা), সর্বদলীয় ভিত্তিতে ভোট ও প্রত্যক্ষ নির্বাচন দাবী (২৬২ পৃষ্ঠা) এবং ১৯৬৫ সনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এ নির্বাচন প্রেসিডেণ্ট আইয়ুব খানের বিরোধী প্রার্থী মিস ফাতেমা জিন্নাহ কে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকারকামী রাজনৈতিক দলই সমর্থন জানায়। এর দলিল পাওয়া যাবে ২২৮ থেকে ২৫৫ পৃষ্ঠায়।

 নির্বাচনের ফলাফলের পর বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি দেশের মানুষের সামনে নতুন কর্মসূচী প্রদান করে। ১৯৬৫ সনে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ১৪-দফা কর্মসূচী প্রদান করে (২৫৭-২৬৬ পৃষ্ঠা) এবং ১৯৬৬ সনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ৬ দফা কর্মসূচী দেয় (২৬৭-২৭৬ পৃষ্ঠা); ৬ দফার সমর্থনে ৭ই জুনে অনুষ্ঠিত হরতাল, পুলিশের গুলিবর্ষণ (২৭৭ পৃষ্ঠা) এবং সর্বব্যাপী প্রতিবাদের চিত্র (২৭৭-২৮৩ পৃষ্ঠা) দলিলসমূহে পাওয়া যাবে।

 বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর পাকিস্তানী শাসকবর্গের আক্রমণাত্মক নীতির বিরাধিতার দলিল সংযোজিত হয়েছে ২৮৮-২৯০ পৃষ্ঠায়। পরবর্তীকালে বাংলা বর্নমালার ওপর হস্তক্ষেপ প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলনের চিত্র পাওয়া যাবে ৩৭২-৩৭৯ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত দলিলসমূহে।

 ১৯৬৮ সনের ৬ জানুয়ারী কিছুসংখ্যক বেসামরিক বাঙালী নাগরিক এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় (৩০৪-৩০৬ পৃষ্ঠা)। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বলে কথিত এই মামলায় প্রধান আসামী হন জেলে আটক অবস্থায় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান। এই মামলা সংক্রান্ত দলিল রয়েছে ৩০৪-৩৬৮ পৃষ্ঠায়।