পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড
217
শিরোনাম সূত্র তারিখ
সামরিক শাসনোত্তর প্রথম শহীদ দিবসে ছাত্র সমাজের বক্তব্য ছাত্র সমাজের প্রচারপত্র ১৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৩

অমর একুশে ফেব্রুয়ারী

শহীদ দিবস পালন করুন

বন্ধুগণ,

 শহীদের স্মৃতি-বিজড়িত অমর একুশে ফেব্রুয়ারী বৎসরান্তে আমাদের দ্বারে সমাগত। শহীদের রক্তরঞ্জিত এই পবিত্র দিবস আমাদের আবেগ, অনুভূতি ও চেতনার এক মহৎ অংশকে জুড়িয়া আছে। অন্যান্য বৎসরের ন্যায় এবারও আমরা আমাদের শহীদ-ভাইদের পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশ্যে আমাদের হৃদয়ের প্রেম, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার অর্ঘ্য নিবেদন করি; আমরা যথাযোগ্য মর্যাদার সহিত এই মহান দিবস উদযাপন করিব।

 মুখের ভাষার ন্যায়সঙ্গত দাবীকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এগার বৎসর পূর্বে ১৯৫২ সালের এই দিনে যাহারা অকুতোভয় প্রাণ বিসর্জন দিয়াছিলেন, তাহারা সশরীরে আমাদের মধ্যে নাই বটে, তবে তাঁহারা যে অবিনশ্বর আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন আমরা তাহার উত্তরাধিকারী। ভাষার দাবী মানুষের জন্মগত অধিকারের দাবী। এগার বৎসর পূর্বে স্বৈরাচারী শাসকচক্রের বুলেট আর বেয়নেট সেই দাবীকে স্তব্ধ করিয়া দিতে চাহিয়াছিল। নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢালিয়া দিয়া সেই চক্রান্ত প্রতিরোধ করিয়াছিলেন বরকত, সালাম, রফিক, জববার এবং অনেক নাম-না-জানা শহীদ ভাইরা। একুশে ফেব্রুয়ারী তাই এদেশের ছাত্র-জনতার গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতীক দিবস। এই ঐতিহাসিক দিবসকে কেন্দ্র করিয়া সারা পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষাভাষীর গণতান্ত্রিক স্বাধীকারের আন্দোলন গড়িয়া উঠিয়াছে। এই দিবস আজ তাই আমাদের সুমহান জাতীয় দিবসে পরিণত হইয়াছে।

 অন্যান্য বৎসরের চাইতে এ বৎসর এক বিশেষ পরিস্থিতিতে একুশে ফেব্রুয়ারীর আগমন ঘটিতেছে। চুয়াল্লিশ মাসব্যাপী সামরিক শাসনের অবসান দেশে গণতন্ত্রের মুক্তবায়ু প্রবাহিত হইবে এবং ছাত্র-জনতার সর্বব্যাপী সমস্যা সমাধানের বাস্তব চেষ্টার সূত্রপাত হইবে বলিয়া এবং আশা সৃষ্টি হইয়াছিল, কার্যক্ষেত্রে তাহা সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রতিপন্ন হইয়াছে। পক্ষান্তরে দেশময় চলিতেছে এক ঘোরতর অনিশ্চয়তা - যে অনিশ্চয়তা গণবিরোধী শাসকচক্রের গণতন্ত্র-বিরোধী নীতি ও কার্যকলাপেরই অবশ্যম্ভাবী প্রতিফল। গত ফেব্রুয়ারী হইতে এই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত দলে দলে ছাত্র গ্রেফতার করা হইতেছে, জেলে পাঠান হইতেছে, তাহদের উপর অনেককে রাস্টিকেট করা হইতেছে, অনেকের বৃত্তি বাতিল করা হইতেছে এবং প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ ছাত্র সমাজের উপর সশস্ত্র গুণ্ডাদল লেলাইয়া দেওয়া হইতেছে, এক কথায় নির্বিচারে ছাত্র-দলন এবং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের উপর নজিরবিহীন হামলায় এ দেশের শিক্ষা শিক্ষা-ব্যবস্থা ও শিক্ষা জীবন বিপর্যস্ত হইতে চলিয়াছে। দেশের এই ঘন-তমসাময় পরিস্থিতিতে শহীদের স্মৃতি-বিজড়িত একুশে ফেব্রুয়ারীর পুনরাবির্ভাব সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

 এদিকে গণবিরোধী সরকার শহীদ মিনারের আরব্ধ কাজ সম্পূর্ণ করার কাজে হাত দিয়াছেন। হয়তো এবারে ইহা সম্পূর্ণ হইবে। ইহা নিশ্চিন্তভাবেই ছাত্র-জনতার আপোষহীন সংগ্রামের জয়ের সূচনা। কিন্তু যে গৌরবময় মহান আন্দোলনের ঐতিহ্যের প্রতীক এই শহীদ মিনার, বর্তমান শাসকচক্র সেই আন্দোলনকেই গলা টিপিয়া