পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

231 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড বলিয়াছিলেন যে, অফিসারদের চাকুরী সম্পর্কে তিনি যে সকল হুকুম দিয়াছিলেন তার ভিতর একটি হুকুম সম্পর্কেই ঐ কথা উঠিতে পারে। সে হুকুম হইল সেনাবাহিনীর জনাব আইয়ুব খাঁ’র চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধির হুকুম। তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইস্কান্দার মীর্জা। দেখা যায় যে, গোলাম মোহাম্মদ ও ইস্কান্দার মীর্জা যখন পাকিস্তান রাষ্ট্রের মালিক হইয়া বসিয়াছিলেন তখনই বার বার জনাব আইয়ুব খাঁর চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। পাকিস্তানের রাজনৈতিক গগনের ঐ দুইটি অশুভ গ্রন্থেও সাথে জনাব আইয়ুব খাঁর ‘বন্ধুত্বের আরও প্রমাণ পাওয়া গিয়াছিল ১৯৫৫ সনে, যখন গোলাম মোহাম্মদ গায়ের জোরে তদানীন্তন গণ-পরিষদ ভাঙ্গিয়া দিয়া তাঁহার কুখ্যাত ট্যালেন্ট মন্ত্রিসভা’ গঠন করেন। তিনি তাহার ভিতর জনাব আইয়ুব খাঁকে আনিয়া তাঁহাকে দেশরক্ষামন্ত্রী পদে বহাল করেন। সেনাধিনায়ক আইয়ুব খাঁ সেই প্রথম পাকিস্তানের রাজনৈতিক গগনে আর্বিভূত হন। প্রকাশ যে, গোলাম মোহাম্মদ যখন অসুস্থাবশতঃ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব পালনে অক্ষম হইয়া পড়েন তখন ট্যালেন্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে জনাব জনাব আইয়ুব খাই গোলাম মোহাম্মদের স্থলে ইস্কান্দার মীর্জার নাম প্রস্তাব করেন। জনাব আইয়ুব খাঁ নাকি সেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্পষ্টভাবে বলিয়াছিলেন, ‘Army wants General Iskander Mirza to be the head of the State (GFRtford ইচ্ছা যে, জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা রাষ্ট্রের প্রধান হউন)। কেহ নাকি ইহার প্রতিবাদ করেন নাই বরং জনাব আইয়ুব খাঁর সমর্থনে ইস্কান্দার মীর্জার মত ব্যক্তি পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল পদে বসিতে পারিলেন। ইহার পর ১৯৫৮ সনের অক্টোবরে ঐ ইস্কান্দার মীর্জার নেতৃত্বেই সেনাধিনায়ক জনাব আইয়ুব খাঁ ও তাঁহার সহচরগণ পাকিস্তানে সামরিক শাসন কায়েম করেন এবং বহু কষ্টে রচিত ১৯৫৬ সনের শাসনতন্ত্র টুকরা টুকরা করিয়া ফেলেন। ইহার মাত্র ২০ দিন পর জনাব আইয়ুব খাঁ ইস্কান্দার মীর্জাকেই দূর করিয়া দেন এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রের অধিনায়ক হইয়া বসেন। এইভাবে, বৃটিশ আমলের সামরিক অফিসারের পদ হইতে জনাব আইয়ুব খাঁ বৃটিশ শিক্ষিত আমলা কুখ্যাত গোলাম মোহাম্মদ-ইস্কান্দার চক্রের সাথে বন্ধুত্বের পথে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে আরোহণ করেন। ভূতের মুখে রাম নাম সেই জনাব আইয়ুব খাঁ আজ আবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হইয়া গণতন্ত্রের কত কথাই না বলিতেছেন! তিনি বলিতেছেন যে, তাহার বুনিয়াদী গণতন্ত্র’ নাকি গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক অভিনব অবদান’, তিনি নিজে ভোটের জন্য জনগণের দুয়ারে উপস্থিত হইয়াছেন। বিরোধী পক্ষকে ‘অবাধে নির্বাচনের অভিযান চালাইতে দিতেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ১৯৫৮ সনের অক্টোবরে যে “বিপ্লব’ তিনি করিয়াছিলেন সেই “বিপ্লবের” প্রথম কাজই ছিল গণতন্ত্রকে জবেহ করা। সামরিক শাসন জারির প্রথম ঘোষণাতেই আইনের শাসন উচ্ছেদ করিয়া সামরিক আইনে দেশ শাসন করার কথা ঘোষণা করা হয়। সেই ঘোষণাতে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করিয়া, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করিয়া, বাকস্বাধীনতা হরণ করিয়া, জনগণের সভা-মিছিল করিবার অধিকার পদদলিত করিয়া এক নিমিষে সারা দেশে সামরিক সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়। মওলানা ভাসানী, খান আবদুল গফফার খানের মত দেশবরেণ্য নেতৃবৃন্দসহ শত শত দেশপ্রেমিককে কারাগারে বিনা বিচারে আটক করা হয়, বহু কর্মীর বিরুদ্ধে