পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

233 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড জিন্নাহর নির্বাচনী অভিযানে দমননীতি প্রয়োগ করা হইতেছে না বলিয়া এই সরকারের ‘গণতন্ত্র প্রীতি’ জাহির করার ও কোন কারণ নাই। কারণ, কায়েদে আজমের ভগিনীর নির্বাচনী অভিযানে দমননীতি দ্বারা বাধা দেওয়ার মত দুঃসাহস এই দেশে কাহারও থাকিতে পারে না। ওটা নিয়া জনাব আইয়ুব খাঁ’র বড়াই না করাই ভাল। তাছাড়া আজ নির্বাচনী অভিযানে সরকার সরাসরি দমননীতি প্রয়োগ করিতেছে না বলিয়া এই সরকারের পূর্বেকার বর্বরতা ও হিংস্র দমননীতি জনগণ ভুলিতে পারে না। রাতারাতি সরকারের গণ-বিরোধী চরিত্র পরিবর্তিত হইতে পারে না। সর্বোপরি এই নির্বাচনী ব্যবস্থায় যেগুলি আসল নির্বাচন, সেই প্রেসিডেন্ট ও আইন সভাগুলির নির্বাচনে জনগণের কাছে কোন ভোটই নাই। খাজনা-ট্যাক্স দেওয়ার বেলায় জনগণ, কিন্তু ভোটের বেলায় শূণ্য। সেই ভোটের অধিকারী সারা দেশে শুধু ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী’। ‘মৌলিক গণতন্ত্রী সংস্থা গ্রামের ও শহরের উন্নয়ন কাজের জন্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানরুপে কাজ করাক ইহা সবাই চায়। কেহই ইহাকে বিলোপ করিতে চায় না। কিন্তু দেশের দশকোটি লোকের ভিতর শুধু ঐ ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রীকে প্রেসিডেন্ট ও আইনসভাগুলির নির্বাচনের অধিকার দান করিয়া জনাব আইয়ুব খাঁ এই নির্বাচনকে একটা প্রহসনে পরিণত করিয়াছেন এবং গণতন্ত্রের মূলেই কুঠারঘাত করিয়াছে। এহেন জনাব আইয়ুব খাঁর মুখে গণতন্ত্রের কথা ভূতের মুখে রাম নামের মত শুনাইতেছে। কবরের স্থিতিশীলতা” প্রতিপন্ন করার জন্য নজির দেখাইতেছেন যে, পূর্বে পার্লামেন্টারী শাসনের আমলে রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতার কাড়াকড়ি করিয়া দেশে এক এক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করিয়া দেশকে জাহান্নামে পাঠাইতেছিলেন। তিনি উহা হইতে দেশকে রক্ষা করিয়াছেন। এবং তাঁহার শাসনতন্ত্রে প্রেসিডেন্সিয়াল শাসন চালু করিয়া দেশে স্থিতিশীলতা আনয়ন করিয়াছেন। কিন্তু আসল সত্য হইল যে, আমাদের দেশে প্রকৃত পার্লামেন্টার প্রবর্তিতই হয় নাই। ১৯৫৬ সনের শাসনতন্ত্রে ঐ পার্লামেন্টারী শাসনের ব্যবস্থা করা হইয়াছিল মাত্র। ইহা বাস্তবায়িত করার জন্য যখন দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের সার্বজনীন ভোটে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হইতেছিল তখনই ইস্কান্দার মীর্জার নেতৃত্বে জনাব আইয়ুব খাঁ প্রমুখ সামরিক নেতারা সামরিক শাসন কায়েম করিয়া সে নির্বাচনকে অনুষ্ঠিত হইতে দেন নাই। আইয়ুব ভ্রাতা বাহাদূর খাঁ ভভ জাতীয় পরিষদে একথাও বলিয়াছিলেন যে, মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদীরাও ঐ সামরিক শাসন জারিতে অনুপ্রেরণা দিয়াছিল। কাজেই সত্য ঘটনা বলিতে গেলে বলিতে হয় যে, মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদীগণ এবং ইস্কান্দার মীর্জা ও জনাব আইয়ুব খাঁ প্রমুখ পার্লামেন্টারী শাসন ব্যবস্থার জন্মের পূবেই উহাকে হত্যা করিয়াছেন। যদি ধরিয়া লওয়া যায় যে, পাকিস্তানের জন্মের পর হইতে বৃটিশের যে শাসনতন্ত্র অনুযায়ী (১৯৩৫ সনের শাসনতন্ত্র) দেশ শাসিত হইতেছিল তাহাতে মূলতঃ পার্লামেন্টারী ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল তাহা হইলেও দেখা যায় যে ঐ পার্লামেন্টার শাসন ব্যবস্থা অনুযায়ী মুসলিম লীগ দল একটানাভাবে ১৯৫৪ সন পর্যন্ত দেশ শাসন করিয়াছে। তখন কেহই ইহাকে অকেজো বা দেশের স্থিতিশীলতার পক্ষে হানিকর বলিয়া মনে করেন নাই। তবে ইহা অনস্বীকার্য যে, ১৯৫৩ সনে একবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বে এবং ১৯৫৪ সনে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনে মুসলিম লীগেম শোচনীয় পরাজয় ও যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠনের পর হইতে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রিত্বে বার বার পরিবর্তন হইয়াছে। কিন্তু ঐ সব ঘটনার জন্য দায়ী কাহারা?