পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

235 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড আমাদের দেশে এরুপ স্থিতিশীল সরকার গঠনের জন্য আজ জনাব আইয়ুব খাঁ'র প্রেসিডেন্সিয়াল শাসন তথা একনায়কত্বের অবসান করিয়া পালামেন্টারী শাসন প্রবর্তিত করিয়া জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সরকার পূর্বে বহু মন্ত্রিসভার নাটকীয় পরিবর্তন প্রভৃতি দেখিয়া অনেকের হয়ত এরুপ আশংকা হইতে পারে যে, পার্লামেন্টারী শাসন ব্যবস্থা চালু হইলে আবার ঐসব ঘটনা ঘটিবে। কিন্তু, গত সংখ্যার আলোচনাতেই ইহা দেখান হইয়াছে যে, পার্লামেন্টারী শাসন ব্যবস্থার জন্য ঐসব ঘটনা ঘটে নাই। ঐ ঘটনার মূল কারণ ছিল গণবিরোধী শক্তিগুলির চক্রান্ত। ভিতর ক্ষমতা দখলের জন্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলিতে পারে এবং চলিবেও। বিভিন্ন সময়ে সরকারের পরিবর্তনও হইতে পারে। কিন্তু, ইহাতে দেশের কোন ক্ষতি হইবার কথা নয়। কারণ বিভিন্ন দল ক্ষমতার জন্য যত কিছুই করুক না হইবে। জনগণই তখন বিচার করিবেন কোন দল ভাল, কোন দল মন্দ এবং এই বিচার করিয়াই জনগণ বিভিন্ন দলের পক্ষে ও বিপক্ষে ভোট দিবেন। যে দল জনগণের অধিকাংশের ভোট পাইয়া আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করিবে সেই দল সরকার গঠন করবে। এই পন্থা হইল সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক। ইহাতে দেশের অনিষ্ট হইতে পারে না। বরং বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক শিক্ষা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়া জনগণ বিভিন্ন দলকে রাজনৈতিকভাবে বিচার করিবেন, জনগণের রাজনৈতিক শিক্ষা হইবে, জনগণের রাজনৈতিক চেতনা বাড়িবে এবং দেশে ‘চক্রান্তের রাজনীতির বদলে একটা সুস্থ রাজনৈতিক জীবন গড়িয়া উঠিবে। দেশের প্রগতির জন্য ইহা অবশ্য প্রয়োজন। ঐ পন্থায় সরকার পরিবর্তিত হইলেও দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভাঙ্গে না। কেননা, যে কোন দলই সরকার গঠন করুক, উহাকে দেশের জনগণের সমর্থন ও ভোট নিয়া ইহা করিতে হইবে। ইহার ফলে সরকার পরিবর্তিত হইলেও, নুতন সরকারও স্থিতিশীল হইয়া দেশ শাসন করে। ইহার দৃষ্টান্ত আমরা দেখিতে পাইতেছি বৃটেনে। তাছাড়া, ইহাও উপলব্ধি করা দরকার যে আজ স্থিতিশীলতার নাম করিয়া জনাব আইয়ুব খাঁ যে প্রেসিডেন্সিয়াল শাসন প্রবর্তন করিয়াছেন উহার মূল কথা হইল একনায়কত্ব। সহজ কথায় উহা হইল একের শাসন। পার্লামেন্টার প্রথায় যে শাসন চালু হইবে উহার সার্বভৌম ক্ষমতা থাকিবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত আইনসভার হাতে। ইহা হইল গণতন্ত্র। সহজ কথায় ইহা হইল দলের শাসন। এই দুই শাসন ব্যবস্থার ভিতর কোনটি দেশের পক্ষে ভাল- একনায়কত্ব না গণতন্ত্র? একের শাসন, না দলের শাসন? ইহা জনগনকে বিচার করিতে হইবে। আইয়ুবী উন্নয়নের চেহারা জনাব আইয়ুব খাঁ শাসনের আমলে দেশের নানাবিধ উন্নয়ন করা হইয়াছে বলিয়া রেডিও, সরকারী দলের সংবাদপত্র ও বক্তৃতামঞ্চ হইতে অহরহ প্রচার করা হইতেছে। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর হইতে দেশে শিল্পের অগ্রগতি হইয়াছে এবং কলকারখানার সংখ্যা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাইয়াছে। গত ১৭ বৎসরেই ইহা ঘটিয়াছে। ইহা বিশেষ কোন সরকারের কৃতিত্ব নহে। তবে এই সঙ্গে ইহাও