পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

237 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড মার্কিনীদের এই টাকা ঢালা হইতেছে গ্রামে গ্রামে। ইহাতে গ্রামের রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন যতটুকু হয়, তার চেয়ে অনেক বেশী উন্নতি হয় কতকগুলি দুনীতিপরায়ণ লোকের। এই দুনীতিপরায়ণ লোকগুলিই হইতেছে গ্রামে গ্রামে আইয়ুব সরকারের সমর্থক। প্রকৃতপক্ষে, ওয়ার্কস প্রোগ্রামের টাকা ছড়াইয়া দুনীতির মাধ্যমে সরকার গ্রামে গ্রামে তাহার সমর্থক একদল টাউট সৃষ্টি করিয়াছে। দেশ আজ দুনীতিতে ভরিয়া গিয়াছে। গুটিকয়েক ধনিক পরিবারের শোষণের সাম্রাজ্য গড়িয়া উঠিতেছে। বড় বড় ভূস্বামীরা অবাধে কৃষকদের শোষণ করিতেছে, ব্যবসায় মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের অবাধ কর্তৃত্ব কায়েম হইয়াছে এবং গ্রামে গ্রামে দুনীতিপরায়ণ টাউটদের রাজত্ব চলিতেছে। পক্ষান্তরে শ্রমিক, কৃষক ও জনগণ দিন যাপন করেন অভাবে ও উপবাসে। বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের শোষণ এহেন আইয়ুব সরকার বৈদেশিক নীতি নিয়াও আবার গর্ব করে। পাকিস্তানের বৈদেশিক নীতিতে গত তিন-চার বৎসরের ভিতর কয়েকটি পরিবর্তন ঘটিয়াছে। ইহার প্রধান কারণ হইল দুনিয়ার রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন এবং দেশের অভ্যন্তরে মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে জনগণের বিক্ষোভ। দুনিয়ার রাজনীতিতে মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদীরা যেভাবে মার খাইতেছে এবং ভারতের অস্ত্র সাহায্য ও অন্যান্য অভিজ্ঞতায় বৈদেশিক নীতির পরিবর্তনগুলির মূল কারণ হইল কতকগুলি ঘটনা প্রবাহ। যাহার ভিতর আইয়ুব সরকারের কেরামতি নগণ্য। জনাব আইয়ুব খাঁ আজ যদি সত্যি সত্যিই বৈদেশিক নীতির পরিবর্তন কামনা করেন, তাহা হইলে তিনি কেন সিটো’ ও ‘সেন্টো বাতিল করিতেছেন না? মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদীদের সহিত অনুষ্ঠিত অন্যান্য অসম দ্বিপক্ষীয় সামরিক চুক্তিগুলিও তিনি নাকচ করিতেছেন না কেন? মার্কিনীদের সহিত সামরিক চুক্তিসমূহ অনুষ্ঠানের ইতিহাস যাহারা অবগত আছেন, তাঁহারা জানেন যে, পাকিস্তানের যে চারজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বার বার আমেরিকা গিয়ে মার্কিনীদের সামরিক ও অর্থ সাহায্য ভিক্ষা করিয়াছেন, তাঁহাদের ভিতর তদানীন্তন সেনাধ্যক্ষ জনাব আইয়ুব খাঁ ছিলেন অন্যতম প্রধান ব্যক্তি। ১৯৫১-৫৩ সনের মধ্যে গোলাম আযম, ইস্কান্দার মীর্জা, জনাব আইয়ুব খাঁ প্রমুখরা বার বার মার্কিনী মুল্লুকে গিয়া ঐসব চুক্তি রচনার জন্য দেন-দরবার করিয়াছেন। ঐ সব চুক্তির আসল রচিয়তা তাঁহারা। যেসব চুক্তি রচনাতে জনাব আইয়ুব খাঁ অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করিয়াছিলেন, সেই সব চুক্তি তিনি স্বেচ্ছায় বাতিল করবেন, সে আশা করা বৃথা। আইয়ুব সরকারের আমলে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে মার্কিনী পুঁজির শোষণও বিন্দুমাত্র কমে নাই। বরং মার্কিনী পুঁজির অনুপ্রবেশ ক্রমাগত বাড়িয়া চলিতেছে এবং বর্তমানে মার্কিনী ঋণের পরিমান ১০০০ কোটি টাকার উর্ধ্বে উঠিয়াছে। দু’এক বৎসরের মধ্যেই ইহার সুদ হিসাবে বৎসর বৎসর প্রায় ৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করিতে হইবে। দেশটাই যেন মার্কিনী ঋণের নিকট বাঁধা পড়িয়া গিয়াছে। দেশের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন হইতে যে বৃটিশ পুঁজি নিয়োজিত ছিল তাহা এখনও রহিয়াছে। অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিও নুতন করিয়া অনুপ্রবেশ করিতেছে। ইহারাও দেশের সম্পদ শোষণ করিয়া নিতেছে।