পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

240 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড গণতন্ত্রই অগ্রগতির পথ ১৯৫৪ সনে গণবিরোধীরা চক্রান্ত করিয়া যেভাবে যুক্তফ্রন্টে ভাঙ্গন ধরাইয়াছিল, তাহার পুনারবৃত্তি যাহাতে ঘটিতে না পারে, সেই জন্যই আজ সম্মিলিত বিরোধীদলের পক্ষ হইতে পূর্ণ গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পার্লামেন্টারী শাসনের দাবী উত্থাপিত হইয়াছে। যুক্তফ্রন্ট ভাঙ্গনের যে বাস্তব কারণসমূহের কথা উপরে বলা হইয়াছে, তাহাতে বুঝা যায় যে, তখন যদি গণবিরোধীদের চক্রান্তের রাজনীতির বদলে দেশে সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতি চালু করা যাইত, তাহা হইলে যুক্তফ্রন্টে ঐ ভাঙ্গন আসিত না। যুক্তফ্রন্ট নেতাদের ভিতর দলাদলি হইলেও মন্ত্রিত্ব লাভের জন্য তাঁহাদের উপরতলার গণবিরোধী চক্রের শরণাপন্ন না হইয়া জনগণের দুয়ারে উপস্থিত হইয়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাহার চেষ্টা করিতে হইত। কিন্তু, গোলাম মোহাম্মদ- ইস্কান্দার চক্র তখন ঐ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকেই হত্যা করিয়াছিল। গোলাম মোহাম্মদইস্কান্দার মীর্জা যাহা শুরু করিয়া গিয়াছিল, জনাব আইয়ুব খাঁ তাহার পরিসমাপ্তি ঘটাইয়াছেন ১৯৫৮ সনের অক্টোবর মাসে সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে। সেই অবস্থা হইতে আজ গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য সম্মিলিত বিরোধীদল নির্বাচনী সংগ্রামে নামিয়াছে। যদি বিরোধী দলের এই প্রচেষ্টা সফল হয়, যদি জনগণের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পার্লামেন্টারী ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়, তাহা হইলে তখন সম্মিলিত বিরোধী দলের অঙ্গদলগুলি নিজেদের ভিতর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিতা করিলেও, সেই অবস্থায় যে সরকারই গঠিত হউক, তাহাকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হইতে হইবে। ইহার ফলে দেশের কোন অমঙ্গল হওয়া দূরে থাকুক দেশে সুস্থ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি গড়িয়া উঠিবে। বস্ততঃ আধুনিক পার্লামেন্টারী গণতান্ত্রিক শাসনের মূল কথাই হইল বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিতর প্রতিদ্বন্দিতা এবং জনগণের ভোটে যে কোন দলের সরকার গঠিত হওয়া। কাজেই পার্লামেন্টারী শাসনের অধীনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও থাকিবে, ঐ দলগুলির ভিতর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিতাও থাকিবে। সম্মিলিত বিরোধীদল ঐরুপ শাসন ব্যবস্থা কায়েম করিয়া জনগণের হাতে সরকার গঠনের দায়িত্ব দিতে চায়। এরূপ গণতান্ত্রিক পরিবেশেই দেশের সত্যিকারের অগ্রগতি হইতে পারে। ইহাতে আবার ১৯৫৪ সনের মত নোংরা দলাদলি হইবে- এরূপ কোন কথাই আসিতে পারে না। তখন আসিবে নীতি ও কর্মসূচীর ভিত্তিতে সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিতা- যা ভালমন্দ বিচার হইবে জনগণের সুউচ্চ দরবারে। সম্মিলিত বিরোধীদলকে জনসমক্ষে হেয় বলিয়া প্রতিপন্ন করার জন্য জনাব আইয়ুব খাঁ আরও বলিয়াছেন যে, ১৯৫৪ সনের যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্ব ছিল মরহুম ফজলুল হক ও সোহরাওয়াদীর ন্যায় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও প্রজ্ঞাবান নেতাদের হাতে আজ ইহাদের তুলনায় সম্মিলিত বিরোধীদলের বর্তমান নেতারা ‘ বামন মাত্র। জনাব আইয়ুব খাঁর কথার কোন ঠিকই নাই। কোন কোন স্থানে তিনি যুক্তফ্রন্টের সব নেতাদের কসিয়া গালি দিতেছেন, আবার সুযোগ বুঝিয়া তাঁহাদের প্রশংসা করিতেছেন। ইহার নাম চরম সুবিধা বাদ। যাহা হউক, মরহুম শেরে বাংলা ও সোহরাওয়াদীর তুলনায় রাজনৈতিক বিচক্ষণতা প্রভৃতি দিক দিয়া আজিকার সম্মিলিত বিরোধীদলের নেতৃত্ব দুর্বল না সবল সে প্রশ্ন এখানে প্রধান নয়। জনাব আইয়ুব খাঁর জানা দরকার যে, মরহুম শেরে বাংলা ও সোহরাওয়াদী সারা জীবন গণতন্ত্রের যে আদশের জন্য কাজ করিয়া গিয়াছেন, সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই আজ সম্মিলিত বিরোধীদলের নেতৃত্ব একযোগে একনায়কত্বের বিরুদ্ধে