পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

251 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড না । আমি নিজেই এ বিষয়ে দলিল-প্রমাণ সহকারে বলিষ্ঠভাবে ইতিপূর্বে কয়েকবারই বলেছি, আর আজও আমি এই কথারই পুনৰ্ঘোষণা করছি। কিন্তু বর্তমান মুহুর্তে আমাদের সামনে বিষয়টি এ সাদাসিধেভাবে উপস্থিত হয়নি যে, নারী মুসলমানদের আমীর হতে পারে কিনা তা নিয়েই আমরা মাথা ঘামাতে বসবো। বরং আমরা বর্তমানে এক বিশেষ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে আছি, তা হচ্ছে এইঃ o দেশে এক জবরদস্তিমূলক অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা চালু হয়ে রয়েছে, তা আমাদের ধর্ম, চরিত্র, তাহজীব-তামাদুন, অর্থনীতির পক্ষে অত্যন্ত মারাত্মক। o এ ধরনের শাসন ব্যবস্থাকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় পরিবর্তন করার জন্য আগামী নির্বাচনে খোদার দেয়া এক মহা সুযোগ পাচ্ছি। O দেশে মুহতারিমা ফাতিমা জিন্নাহ ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তিত্ব এমন নেই যাকে কেন্দ্র করে দেশের বিরাটসংখ্যক লোক একত্রিত হতে পারে, আর নিৰ্ব্বাচনে সফলতা লাভ করতে পারে ও এ উপায়ে বৰ্ত্তমান স্বৈরতন্ত্রী জালেম শাসন ব্যবস্থাকে খতম করে দেওয়ার কোন সম্ভাবনা হতে পারে। O মুহতারিমা ফাতিমা জিন্নাহর প্রার্থী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সাধারণ জনতা তাঁর সমর্থনে কোমর বেঁধে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। O তাঁর পরিবর্তে অপর কোন ব্যক্তিকে দাঁড় করানো কিংবা এই নির্বচনী সংগ্রামে নিরপেক্ষ থাকার মানে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকেই সাহায্য কর। এমতাবস্থায় আমাদের সামনে আসল প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, একজন মেয়েলোকের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া কি শরীয়াতে এতই আপত্তিকর যে তাঁকে সমর্থন না করে তার বিপরীত বর্তমান জবরদস্তি আর অত্যাচার জুলুমের শাসনকে মেনে নিতে হবে? আমার মতে ইসলামী শরীয়াত সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান রাখে এমন কোন ব্যক্তিই বলতে পারে না যে, একজন নারীকে রাষ্ট্রপ্রধান করার পরিবর্তে এই স্বৈরাচারী ও জালেম শাসনকে কবুল করা উচিত। বরং আমি তো বলবো, একজন নারীকে রাষ্ট্রপ্রধান বানানো যদি এক আনা দোষের কাজ হয় তাহলে তার মুকাবিলায় বর্তমান অত্যাচারী ও জালেম শাসনকে বাঁচিয়ে রাখলে কমপক্ষে দশগুণ বেশী গুনাহ হবে। আর খোদার শরীয়াত তো অনেক বড়, সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধির একটি বালকও এক টাকা বাঁচানোর জন্যে দশ টাকার ক্ষতি স্বীকার করাকে পছন্দ করতে পারে না। এছাড়া, একথাও মনে রাখতে হবে যে, ইসলামের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপ্রধান পুরুষ হওয়া একটি শর্ত বটে, কিন্তু নারীর রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া ইসলামী শরীয়াতে সম্পূর্ণ হারাম- এমন হারাম যে, অত্যন্ত ও ংঘাতিক প্রয়োজন দেখা দিলেও তা জায়েজ হবে না, এমন কথা কেউই বলতে পারে না। কোরআন-হাদিস থেকে যদি কেউ তা প্রমাণ করতে পারেন তবে করুন, আমরাও দেখব। আসলে ইসলামের সাধারণ নিয়মের মধ্যে আমরা কোনই পরিবর্তন করছি না, না তার কোন সংশোধন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু বর্তমানের এই বিশেষ ধরনের অবস্থার কতিপয় প্রয়োজন দেখা দেওয়ার কারণে একজন মহিলাকে রাষ্ট্রপ্রধান করা জায়েজ মনে করছি মাত্র। কেননা, এ কাজ যে চূড়ান্ত ও স্থায়ীভাবে হারাম- এ কথা প্রমাণ করার কোন দলিলই আমরা শরীয়াতে পাইনি, এখন একজন নারীকে যদি আমরা, মেনে না নেই, তাহলে তার অপেক্ষা বহুগুণ বেশী বড় অন্যায়কে মেনে নিতে হয়, এবং তা এত বড় যে, শুধু নৈতিক দৃষ্টিতেই নয়, ইসলামের দৃষ্টিতেও তা অত্যন্ত বড় অন্যায় কাজ হয়ে পড়ে।