পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
253

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড


যদি দুই ব্যক্তির মধ্যে একজনকে গ্রহণ করার প্রশ্ন দেখা দেয়, দুজনের একজনকে অনিবার্যভাবে কবুল করে নিতে হয়, আর তাদের একজনের মধ্যে কেবল নারী হওয়া ছাড়া অন্য কোন আপত্তিকর জিনিষ না থাকে এবং অপর জনের মধ্যে কেবল পুরুষ হওয়া ছাড়া অন্য সব দিকই হয় মারাত্মকভাবে আপত্তিকর, তাহলে ইসলামের জ্ঞানসম্পন্ন কোন ব্যক্তি কি আমাদিগকে নারীকে গ্রহণ না করে সেই পুরুষকেই গ্রহণ করার জন্যে বলতে পারে?

 ভাইগণ, নারীর রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া সংক্রান্ত বিষয়ের শরীয়াতের দৃষ্টিতে এ-ই হচ্ছে প্রকৃত অবস্থা। এই কারণেই আমরা আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুহতারিমা ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এক্ষণে আমি দেশবাসীর নিকট আকুল আবেদন করতে চাই, আপনারা দেশের অধিবাসীরা - কেউই যেন এই নাজুক ও জটিল সংকটের সময় গাফিল হয়ে বসে না থাকেন- এই সুবর্ণ সুযোগকে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে কাটিয়ে না দেন। খুব শান্তভাবে ঠান্ডা মনে চিন্তা করে ফয়ছালা করুনঃ বিগত ছয় বছর ধরে দেশবাসী যে অত্যাচার জুলুম নির্যাতন নিষ্পেষণের তলে নিষ্পেষিত হচ্ছে তাকেই কি স্থায়ী করে রাখতে চান?..... না, এ-কে পরিবর্তন করে এমন এক শাসন -ব্যবস্থা কায়েম করার ইচ্ছা রাখেন, যাতে দেশবাসী এক স্বাধীন মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে জীবন যাপন করার সুযোগ পাবে ও নিজেদের যাবতীয় গুরুতর ব্যাপারে নিজেরাই ফয়ছালা গ্রহণ করতে পারেন? প্রথম অবস্থা গ্রহণ করিতে যদি আপনারা রাজী না হন, বরং দ্বিতীয় অবস্থাকেই দেশে বহাল রাখতে চান, তাহলে খোদার ওয়াস্তে বলছি এই সুযোগকে কিছুতেই হারাবেন না। আপনার ভোট পূর্ণ দৃঢ়তার সঙ্গে কেবলমাত্র সম্মিলিত বিরোধী দলের পক্ষে- মুহতারিমা ফাতিমা জিন্নাহর নামে-ব্যবহার করুন। এই সুবর্ণ সুযোগ যদি আপনারা হেলায় হারিয়ে ফেলেন, তাহলে আপনাকে এবং আপনার ভবিষ্যৎ বংশধরদের এর কুফল দীর্ঘকাল পর্যন্ত ভোগ করতে হবে।

 আমি খোদার নিকট দোয়া করছি, তিনি যেন আমাদের সকলকে সঠিক ও নির্ভুল পথ দেখান এবং ভুল পথে যাওয়া থেকে যেন তিনি আমাদিগকে রক্ষা করেন- আমীন।

(২৯শে নভেম্বর পল্টন ময়দানে প্রদত্ত বক্তৃতা থেকে)

 মাওলানা আতাহার আলী ছাহেব বলেনঃ

 দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মুহতারিমা ফাতিমা জিন্নাহকে রাষ্ট্রপ্রধান পদে ভোট দেওয়া যাইতে পারে না বলিয়া একশ্রেণীর আলেম ও পীর নামধারী স্বাৰ্থবাজ ব্যক্তি পবিত্র কোরআন ও হাদিসের যে ধরনের বিকৃত উদ্ধৃতি ও অপব্যাখ্যা দান করিতেছেন তাহা আমি গভীর উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করিয়াছি। আরো পরিতাপের বিষয় এই যে, দেশের সরলপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার কুমতলবে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ হইতে সেইসব বিকৃত উদ্ধৃতি ও অপব্যাখ্যামূলক তথ্যের ভিত্তিতে অসংখ্য পুস্তক-পুস্তিকা ঘরে ঘরে বিলিবন্টন করা হইতেছে। এমতাবস্থায় খাঁটি সচেতন কোন আলেম ও পীরের পক্ষে কিছুতেই নিশ্চিন্তে বসিয়া থাকা উচিত নহে। আমি দীর্ঘদিন যাবৎ রোগশয্যায় শায়িত থাকিয়াও এইরূপ পরিস্থিতিতে গভীর উৎকণ্ঠা বোধ করিতেছি।এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন নারীকে রাষ্ট্রপ্রধান পদে ভোট দেওয়া জায়েজ নহে বলিয়া যাহার দাবী করিতেছেন, তাহাদিগকে উহা প্রমাণিত করার জন্য আমি চ্যালেঞ্জ প্রদান করিতেছি। পক্ষান্তরে আমি ঘোষণা করিতেছি যে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সাহেব যিনি পবিত্র কোরানকে বিকৃত করিয়া বিভিন্ন ধরনের বিধান জারি করতঃ পবিত্র কোরান ও সুন্নাহর প্রতি চরম অবমাননা প্রদর্শন করিয়াছেন “তাঁহাকে ভোট দেওয়া মুসলমানদের পক্ষে সম্পূর্ণ হারাম”।