পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

258 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ন্যাপের ১৪ দফা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৫ জুন,১৯৬৫ ন্যাপের ১৪ দফা-জাতীয় মুক্তির কর্মসূচী (ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ৪ঠা, ৫ই, ৬ই ও ৭ই জুনের সভায় গৃহীত) স্বাধীনতা লাভের ১৮বছর পর পাকিস্তান আজ বিগত দিনের পুঞ্জীভূত সমস্যায় জর্জরিত হইয়া এক যুগসন্ধিক্ষণে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে। একটির পর আরেকটি সরকার আসিয়াছে, কিন্তু তাহারা সমস্যার সমাধানের পরিবর্তে প্ৰতেকেই পুরাতনের সহিত নতুন সমস্যা যোগ করিয়াছে। ফলে শেষ পর্যন্ত কোন সমস্যাই দূর হয় নাই, উহা আরও বৃদ্ধি পাইয়াছে এবং দেশের সম্মুখে এক ভয়াবহ ইঙ্গিত বহনকারী সঙ্কটের উদ্ভব হইয়াছে। এই সঙ্কটের গুরুত্ব আরও প্রকটিত হইয়াছে সেপ্টেম্বরের পাক-ভারত যুদ্ধের সময়। যুদ্ধের সময় আমরা যে পরীক্ষায় সম্মুখীন হইয়া ছিলাম তাহার ফলে আমাদের বহু ভুল ধারণা পরিবর্তন হইয়াছে, বহু ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত ফল ফলিয়াছে। ক্ষমতাসীনেরা জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন যে-সমস্ত মৌলিক সমস্যা হিমাগারে নিক্ষেপ করিয়া রাখিয়াছিল তাহ নূতন গুরুত্ব লইয়া অকস্মাৎ প্রকট হইয়া উঠিয়াছে এবং অবসাদগ্ৰস্ত সমগ্র জাতিকে নাড়া দিয়াছে। বিগত সময়ের যে সকল সমস্যা সমাধান তো দূরের কথা স্পৰ্শই করা হয় নাই, উহা আজ অধিকতর গুরুত্ব লইয়া হাজির হইয়াছে। সংক্ষেপে বলিতে গেলে বলা যায় যে, সমস্যা আজ সমগ্র জাতির মুখোমুখি আসিয়া দাঁড়াইয়াছে এবং সমাধানের বাস্তব কর্মপন্থা গ্রহনের আওয়াজ তুলিয়াছে। পূর্বের যে-কোন সময় অপেক্ষা এখন আমাদের জাতীয় জীবনের অন্তর্নিহিত ত্রুটি ও বৈসাদৃশ্যসমূহ প্রকটভাবে প্রকাশিত হইয়াছে। তাই আজিকার অত্যন্ত জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হইল আমাদের সামগ্রিক জাতীয় গঠন প্রকৃতির একটি নির্দিষ্ট রূপ প্রদান করা। এবার দেশের অর্থনৈতিক পদ্ধতি, প্রশাসনিক কাঠামো, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং পররাষ্ট্রনীতি, প্রত্যেকটিই সত্যকার পরীক্ষার সম্মুখীন হইয়াছে এবং প্রমাণিত হইয়াছে যে, বর্তমানে অনুসৃত নীতির কোনটাই আমাদের প্রয়োজনের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বর্তমান সরকার পদ্ধতি বর্তমান পদ্ধতির সরকার পাকিস্তানের জনগণের জন্য সমপূর্ণ অনুপযোগী; এমনকি মারাত্মক ক্ষতিকর বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে। পাকিস্তানে যে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি চালু রহিয়াছে, তাহা আমাদের দেশের প্রয়োজনের পক্ষে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। এক হাজার মাইল বিদেশী রাষ্ট্রের দ্বারা বিছিন্ন ইহার দুইটি অংশ লইয়া পাকিস্তান এমন একটি প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি চালু রাখিতে পারে না, যেখানে সমস্ত ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হস্তে কেন্দ্রীভূত থাকে। ভাইসরয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল-এর মতো অবিকল একটি কেন্দ্রীয় সরকার, বাজেট ও আইন প্রণয়নের চূড়ান্ত ক্ষমতাহীন একটি জাতীয় পরিষদ, প্রেসিডেন্টের মনোনীত ব্যক্তি হিসাবে দুইজন প্রাদেশিক গভর্নর ও তাঁহাদের নিজস্ব বাছাই করা ব্যক্তিবর্গকে লইয়া গঠিত মন্ত্রপরিষদদ্বয় ও কার্যতঃ ক্ষমতাহীন দুইটি প্রাদেশিক পরিষদ পাকিস্তানের প্রয়োজন মিটাইতে মোটেই সক্ষম নহে। বর্তমানে যে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি চালু রহিয়াছে তাহা পাকিস্তানের অদ্ভদ ভৌগলিক বৈশিষ্ট ও ইহার বিভিন্ন ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সত্তাকে সুষ্ঠুভাবে শাসন করিতে পারে না; কারণ ইহা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপান্তরিত করিতে অক্ষম; যেহেতু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পরিষদ এমন ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত নির্বাচকমন্ডলী কর্তৃক নির্বাচিত হন, যাঁহারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার পরিবর্তে একপেশে, উপজাতীয়, পারিবারিক ও অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর স্থানীয় অবস্থার