পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

259 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড ভিত্তিতে নির্বাচিত হইয়া থাকেন, সেইহেতু রাজনৈতিক দিক দিয়া প্রেসিডেন্ট কিংবা জাতীয় পরিষদ পাকিস্তানের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন, এমন কথা বলা যায় না। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা ১। খাদ্য সমস্যাঃ পাক-ভারত যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হইয়াছে, এবং এই খাদ্য পরিস্থিতি এখন এত তীব্র রুপ ধারণ করিয়াছে যে, প্রদেশব্যাপী বিশেষ করিয়া গ্রাম অঞ্চলে প্রায় দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করিতেছে। চাউল প্রতিমণ ৪০ টাকা ও তদূর্ধ্ব মূল্যে বিক্রয় হইতেছে- যাহা শতকরা অন্ততঃপক্ষে ৯৫ জন লোকের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে। গ্রাম অঞ্চলের জনসাধারণ আরও অতিরিক্ত দুর্দশার সম্মুখীন হইয়াছে লেভী ব্যবস্থার ফলে। লেভী ব্যবস্থা এমনভাবে কার্যকরী করা হইয়াছে যে, ইহা জুলুমে পরিণত হয়েছে এবং ইহার সহিত সার্টিফিকেট প্রথা মিলিত হইয়া এই জুলুমকে গ্রামীণ জনসাধারণের নিকট আরও অসহনীয় করিয়া তুলিয়াছে। এই সব কিছুই খাদ্য সমস্যাকে আরও তীব্রতর করিয়াছে এবং জনসাধারণের দুর্দশাকে বহুমুখী করিয়া তুলিয়াছে। ২। পাটচাষী প্রসঙ্গেঃ পাটচাষীদের উপর শোষণ অবাধভাবে অব্যাহত রহিয়াছে, উপরন্তু ইহা আরও তীব্র হইয়াছে। তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য তাহারা পাইতেছে মণপ্রতি ১৩ টাকা। ইহা তাহদের উৎপাদন ব্যয় অপেক্ষা অনেক কম। ইহার ফলে পাটচাষীরা কোনক্রমে তাহদের শ্রমমূল্য লাভ করিতে পারে- বাঁচার মত মজুরী তাহারা পায় না । পাটের ন্যায্য মূল্য বাধিয়া দেওয়া উহা কার্যকরী করার ব্যাপারে বাস্তব কোন কিছু করা হয় নাই। ফলস্বরূপ, পাট চাষীরা ১৮ বৎসর আগে যেখানে ছিল বস্ত্ততঃ এখনও সেই একইস্থানে রহিয়াছে- পক্ষান্তরে, জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর ব্যয় মাত্র কয়েক বৎসর পূর্বের তুলনায়ও বর্তমানে বহুগুন বৃদ্ধি পাইয়াছে। পাটের বর্ধিত মূল্য হইতে পাটচাষীরা বঞ্চিত হইতেছে, কিন্তু পক্ষান্তরে মুনাফা করিতেছে ফড়িয়া, মিল মালিক ও রফতানীকারকরা। ৩। পশ্চিম পাকিস্তানের কৃষকদের অবস্থাঃ সামরিক শাসনামলে বহুল প্রচারিত ভূমি সংস্কার আজ অতীতের গর্ভে বিলীন হইয়াছে। প্রাক্তন ভূ-স্বামীরা সামরিক শাসনামলের এই সংস্কারকালে হারানো তাহদের অধিকাংশ জমির উপর অধিকার পুনরায় ফিরিয়া পাইয়াছে এবং তাহারা পূর্বের ন্যায় উৎপন্ন শস্য নিৰ্ভয়ে ও অবাধে নিজেদের গোলায় লইয়া তুলিতেছে। শত শত বৎসর ধরিয়া ভূমি মালিকেরা যেভাবে ভূমিহীন কৃষকদের উপর শোষণ চালাইয়া আসিতেছে সেই শোষণ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তাহারা এখনও পূর্ব অধিকার ভোগ করিতেছে। ভূমিহীন কৃষকদের এই দুর্দশার সহিত যোগ হইয়াছে অদৃশ্য ভূস্বামী হিসাবে আমলাতন্ত্রীদের নির্যাতন। বাঁধ এলাকায় বা অন্যান্য সরকারী জমি এই সকল সরকারী কর্মচারীদের সুবিধাজনক দামে বা ‘ইনাম’ হিসাবে প্রদান করা হইতেছে। এইভাবে একটি “অদৃশ্য ভূস্বামী গোষ্ঠী সৃষ্টি করিয়া চিরন্তন ভূমিহীন চাষীদের উপর তাহদের চাপাইয়া দেওয়া হইতেছে। এবং তাহারাও এই অদৃশ্য ভূস্বামী ক্রীতদাসে পরিণত হইতেছে। ইক্ষুচাষীদের অবস্থা পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশেই ইক্ষুচাষীরা শোষিত হইতেছে। চিনি মিল মালিকেরা উচ্চ মূল্যে চিনি বিক্রয় করিয়া যখন প্রচুর অর্থ উপাজন করিতেছি তখন ইক্ষুচাষীরা বিভিন্ন ধরনের শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হইয়া তাহদের ন্যায্য উপাজন হইতে বঞ্চিত। মিল মালিকেরা তাহদের মর্জিমাফিক ইক্ষুর মূল্য