পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

261 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিল্পখাত একচেটিয়াবাদ ও কাটেলের স্বার্থে পুঁজির একত্রীকরণ আরও বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহা পাকিস্তানের জন্য শুভ ইঙ্গিত নয়। ইহা আরও বেশী ভয়াবহ এই কারণে যে, এই নতুন ধারাটি সরকারের আনুকূল্য ও উৎসাহ লাভ করিতেছে। ইহা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক যে, সম্প্রতি অনুমোদিত ৪৮টি নতুন শিল্প রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য মঞ্জুর করা হইয়াছে। এই সকল উপকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে মুখচেনা রাজনীতিক, আমলা, বর্তমান ও অতীতের বহু মন্ত্রী ও পরিষদ সদস্য রহিয়াছেন। এই সমগ্র নীতিটিকে রাজনৈতিক ঘুষ বলিয়া মনে হয়। ইহা সকলেই জানেন যে, এই সকল শিল্প স্থাপনের জন্য যাঁহাদিগকে অনুমোদন দেওয়া হইয়াছে তাঁহারা সকলেই এই পারমিটগুলো খোলা বাজারে বিক্ৰী করিতেছেন এবং বৃহৎ পুঁজিপতিগোষ্ঠী একটি টেক্সটাইল মিলের (সুতা কল) পারমিটের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা প্রদান করিতেও কুষ্ঠিত নয়। সরকারী খাত হইতে ব্যক্তিগত মালিকানার শিল্প প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর মনোপলির স্বার্থে কাজ করিতেছে। জরুরী সম্পত্তি আইনের সাহায্যে দখলকৃত চা-বাগানসমূহ বিশেষ সুবিধাভোগী একচেটিয়া পুঁজির মালিকদিগকে প্রদান করা হইয়াছে। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরের যুদ্ধ ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পাক-ভারত যুদ্ধের অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ফল পাইয়াছে। ইহা একদিকে আমাদের সকলের মধ্যেকার দেশপ্রেমের চেতনা প্রকাশ করিবার পূর্ণ সুযোগ প্রদান করিয়াছিল। তুরখাম হইতে টেকনাফ পর্যন্ত সর্বত্র প্রতিটি পাকিস্তানী দেশ রক্ষার কাজে সামিল হইয়াছিল। ৬ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রতি ইঞ্চি ভূমির স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষাকল্পে মহতী ত্যাগের প্রস্তুতিতে জনগণ নতুন সত্তা লইয়া আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। পাকিস্তানের উভয়াংশ ও ইহার দূর অঞ্চলের জনগণ ইহা প্রমাণ করিয়াছেন যে, তাঁহারা পাকিস্তান, ইহার সংহতি ও ঐক্যের স্বপক্ষে। সাধারণ মানুষের কোন রাজনৈতিক চেতনা নাই- জনগণের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকারের মাধ্যমে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করিয়া ব্যক্তিগত শাসন চিরস্থায়ী ও সীমাহীন সম্পদ কুক্ষিগত করিতে যাহারা অভিলাষী জনগণ তাহদের এই হীন এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করিয়াছেন। আর বেশী দিন জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহকে অস্বীকার করা যাইবে না এবং জনগণ আর অধিক দিন স্বৈরতন্ত্রকে সহ্য করিবে না কিংবা এক-নায়কতুবাদকেও গ্রহণ করিবে না। দ্বিতীয়তঃ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে,এই অঞ্চলের শাসকগোষ্ঠীর অধীনে পাক-ভারত উপ-মহাদেশে একটি যৌথ প্রশাসন ব্যবস্থা সৃষ্টি করিয়া আমেরিকার টাকা ও অস্ত্রের সাহায্যে আমাদের উত্তর অঞ্চলের প্রতিবেশীগণকে প্রতিহত করিবার এবং তদ্বারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে নির্ণয়ের সাম্রাজ্যবাদীদের মহাপরিকল্পনা নিদারুণভাবে মার খাইয়াছে। পাকিস্তান ও ইহার জনগণ সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করিয়াছে। ভারতের সাথে সরাসরি একত্রীকরণ বা কনফেডারেশন গঠন কিংবা যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অথবা যৌথ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কার্যকরীকরণের সম্ভাব্যতার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে সন্দেহের উদ্ভব হইয়াছিল সাময়িকভাবে হইলেও তাহার অবসান ঘটিয়াছে। ইহা দুর্ভাগ্যজনক যে, সরকারের বিভিন্ন প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে যুদ্ধের প্রচারের সাথে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করিয়া দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক আবহাওয়াকে বিষাক্ত করিয়া তোলা হইয়াছিল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিবিচার আক্রমণের শিকারে পরিণত হইয়াছিল।