পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

263 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের অপেক্ষাকৃত অসহায় অবস্থা এবং অস্ত্র নির্মাণ কারখানা স্থাপন করিয়া দেশের উভয় অংশ কর্তৃক অস্ত্রশস্ত্র নিজ নিজ চাহিদাপূরণের ব্যাপারে অক্ষমতা, যাহা সেপ্টেম্বরের যুদ্ধের সময় প্রকট হইয়া পড়িয়াছিল, এড়ান সম্ভব হইত। পাকিস্তানের উভয়াঞ্চলের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজনীয়তা সেপ্টেম্বরের যুদ্ধের ফলশ্রুতি হিসাবে যাহা প্রকটভাবে দেখা দিয়াছে, আমরা শুরু হইতেই উপলব্ধি করিয়াছি। আমরা ১৯৫৭ সালে দাবী করিয়ছিলাম যে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসিত দুইটি ইউনিটের ভিত্তিতে পাকিস্তানকে একটি পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম এবং জনকল্যাণমূলক ফেডারেল রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তোলা উচিত। আমরা পাকিস্তানকে এইরূপ একটি রাষ্ট্র হিসাবে দেখিয়াছি যেখানে রাষ্ট্রের সার্বভৌম অধিকার জনসাধারণেরই উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ ও যুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত গণপরিষদ উহা প্রয়োগ করিবে। আমরা পশ্চিম পাকিস্তানকে একটি আঞ্চলিক ফেডারেশন হিসাবে পুনর্গঠনের দাবী করিয়াছি, যাহার আইন পরিষদে কোন একটি প্রদেশ অন্য প্রদেশ অপেক্ষা অধিকসংখ্যক আসনের অধিকারী হইবে না এবং ভাষা ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিতে প্রদেশসমূহ পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করিয়াছি। পাকিস্তানের উভয়াঞ্চলের জনসাধারণ দরিদ্র, নির্যাতিত এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার, স্বাধীনতা ও মর্যাদা হইতে বঞ্চিত। আমরা মনে করি সমাজতান্ত্রিক সমাজকে গ্রহণ করাই ইহার জবাব। বিভিন্ন দেশে মানুষের অর্জিত শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মুষ্টিমেয় ব্যক্তির স্বার্থে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি পরিহার করা উচিত। সকল পাকিস্তানীকেই আমাদের জাতীয় সম্পদের অংশীদার বলিয়া গ্রহণ করা উচিত। ইহাদের পূর্ণ আত্মবিকাশের অধিকার রহিয়াছে এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির অধীনে সম-সুযোগের অধিকার রহিয়াছে। বর্তমানে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক আরোপিত শাসনতন্ত্র ও সরকারী নীতিসমূহ শুধু যে একটি মুষ্টিমেয় শ্রেণীর স্বার্থরক্ষাকারী এক ব্যক্তির হাতের সমস্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করিয়া দিয়াছে তাহাই নয় ইহা জনসাধারণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তির স্বাধীনতাকে অস্বীকার করিয়াছে। সম্পদ ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হইয়াছে। এই অবস্থায় আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হইবে এমন একটি প্রতিনিধিত্বশীল ও গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়িয়া তোলা যেখানে ক্ষমতা একটি সম্পূর্ণ সার্বভৌম আইন পরিষদে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধিদের হস্তে ন্যস্ত থাকিবে। পাকিস্তানে সকল অংশের ঐক্য রক্ষায় ও সকল পাকিস্তানীর অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রামের ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সকল নাগরিকের সমান সুযোগ, বিভিন্ন এলাকা ও জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ হইতেছে আমাদের সামনে যে সমস্যাবলী রহিয়াছে উহার প্রত্যুত্তরে আমাদের জবাব। সকল পাকিস্তানীর জন্য জনগণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক আমাদের লক্ষ্য। পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমস্যার সমাধান অবশ্যই করিতে হইবে এবং উহার জনগণের উপর বিদেশী, পূর্ব পাকিস্তানী বা পশ্চিম পাকিস্তানী পুঁজিপতি যেই হউক না কেন তাহদের শোষণ খর্ব ও নিয়ন্ত্রিত করিতে হইবে। দেশের সকল অংশকে যথাযথভাবে রক্ষার ব্যবস্থা করিতে হইবে এবং সকল অঞ্চলের জনসাধারণকে জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগদানের পরিপূর্ণ সুযোগ প্রদান করিতে হইবে। সেনাবাহিনীকে জাতীয় ভিত্তিতে গঠন করিতে হইবে, এবং ক্রমশঃ উহার গঠন জনসংখ্যার আনুপাতিক হইতে হইবে। জাতীয় প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি ও মুদ্রা এবং এই সকল বিষয়ে কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ফেডারেল সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকিবে। এবং এইগুলি ছাড়া অপরাপর সকল বিষয়কেই প্রাদেশিকীকরণ করিতে হইবে। পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত সেনাবাহিনীকে ভিত্তি করিয়া পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদানকে প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হইবে। গণতন্ত্র, স্বায়ত্বশাসন ও সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে ঐক্য ও স্বাধীনতার পথে আগাইয়া চল- ইহাই হইতেছে আমাদের শ্লোগান।