পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

281 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড মোট কথা, কৃষক-মজুর-মধ্যবিত্তের জীবন আজ বেকারী, স্বল্প আয়, অগ্নিমূল্য ও ট্যাক্সের জুলায় অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জনাব শোয়েব নয়া ট্যাক্সে সাধারণ মানুষের কোন কষ্ট হইবে না এই আশ্বাস বাণী শুনাইয়া-কাপড়, সাবান, কেরোসিন তৈল ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের উপর কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স ধার্য করিয়াছেন। শোষণ ও শাসনের যাতাকলে পড়িয়া আজ সাধারণ মানুষের বাঁচিয়া থাকাই দায় হইয়াছে। তাই আজ দিকে দিকে শোষিত নিপীরিত মানুষের গগনবিদারী আর্তনাদ ধ্বনিয়া উঠিয়াছে। আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন- সংহতির একমাত্র পথ ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দুই অঞ্চল লইয়া পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আসন পূর্ব পাকিস্তান হইতে প্রায় এক হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। মূলধন, মাল-সামান বা লোকজনের আমতঃ আঞ্চলিক স্বাভাবিক চলাচলের কোন উপায় নাই। পাক-ভারত যুদ্ধ মানুষের চক্ষু খুলিয়াছে বৈমাত্রেয় আচরণের বদৌলতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দেশরক্ষা ব্যবস্থায় ন্যায্য হিস্যা পূর্ব পাকিস্তান পায় নাই। প্রদেশবাসী দেশরক্ষায় আত্মনির্ভরশীলতা দাবী করিলে পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত সামরিক শক্তি পূর্ব পাকিস্তান রক্ষার পক্ষেও যথেষ্ট বলিয়া যুক্তি দেওয়া হইত। কিন্তু যুদ্ধের অগ্নিপরীক্ষায় এই যুক্তির অন্তসারশূন্যতা উদঘাটিত হইয়াছে। পারস্পারিক বিচ্ছিন্নাবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তান হইতে কোন সামরিক সাহায্য প্রেরণ করা দূরের কথা, এমনকি যুদ্ধকালে পূর্ব পাকিস্তানের ভাগ্য কি ঘটিতেছে তাহা সরেজমিনে তদারক করিয়া দেখা স্বয়ং প্রেসিডেন্টের পক্ষেও সম্ভবপর হয় নাই। শত্রর উদ্যত আক্রমণের মুখে এ দেশবাসী নিজেদের সম্পূর্ণ অসহায়তা সেদিন মর্মে মর্মে অনুভব করে। এমতাবস্থায় পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের সুষম অর্থনৈতিক বিকাশ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশরক্ষা ব্যবস্থা গড়িয়া তোলার জন্য পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয়কে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রদান করা অপরিহার্য ছিল। কিন্তু শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে একচেটিয়া সুবিধাভোগী বড় ধনিক গোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানকে অনুন্নত রাখিয়া চিরকাল শোষণ করিবার গরজে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবীকে নস্যাৎ করিতে চায়। ফলস্বরূপ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে আজ পর্বতপ্রমাণ অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হইয়াছে এবং এই বৈষম্যনীতি জাতীয় সংহতির ভিত্তিমূলকেই কমজোর করিতেছে। পশ্চিম পাকিস্তানেও সরহদ, বেলুচিস্তানে ও সিন্ধুর বাসিন্দারা নিজস্ব ভাষা, কৃষ্টির বিকাশ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে ক্রমাগত অধিকতর সচেতন হইয়া উঠিতেছে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাভাষী অঞ্চলের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও পাকিস্তান ফেডারেল সরকারের প্রতিটি ইউনিটের স্বেচ্ছাকৃত মিলনের মধ্যেই যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা ও জাতীয় সংহতি নির্ভরশীল-এই বাস্তব সত্যকে শাসক শক্তি যত তাড়তাড়ি উপলব্ধি করিবে, ততই মঙ্গল। জালিমশাহীর হামলা ও গণতান্ত্রিক শিবিরের কর্তব্য জালিমশাহী আজ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছে। পাকিস্তানের উভয় অংশে শোষিত মানুষ রুটি-রুজি, গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে সংগ্রামের পথে পা বাড়াইয়াছে। উত্তাল গণ-আন্দোলনের মোকাবেলায় গণবিরোধী সরকার অস্ত্রের ভাষাকেই সম্বল করিয়াছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের উত্তাল জনসমুদ্রে উখিত রাজবন্দীদের মুক্তি ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবীর জওয়াব আসিয়াছে পূর্ব পাকিস্তান কামান-বন্দুকের ভাষায়-মৃত্যুর হিমশীতল ছোঁয়ায়। এই বর্বর দমননীতি ও গণহত্যার বিরুদ্ধে আজ সারা দেশ বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে। এই জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা আমাদের নাই। খুনী জালিমের বিরুদ্ধে জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলকে দুর্বার ও জোরদার