পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
287

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড

 শিরোনাম সূত্র তারিখ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে বলে আইয়ুব খানের বিবৃতি

দৈনিক ‘আজাদ ৩১ মার্চ, ১৯৬৭

মোমেনশাহীর জনসভায় প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারী

পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে

 মোমেনশাহী, ২৯ শে মার্চঃ- অদ্য বিকালে মোমেনশাহী সার্কিট হাউস ময়দানে এক বিরাট জনসভায় ভাষণ দানকালে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আইয়ুব খান দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন যে, বর্তমান সরকারের আমলে পূর্ব পাকিস্তান পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করিতেছে।

 সভায় পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভণর জেনারেল আব্দুল মোনায়েম খানও উপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের এই সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পরিষদের স্পীকার জনাব আব্দুল জববার খান। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব তাহার বক্তৃতায় বলেন, নিজস্ব বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য পূর্ব পাকিস্তানকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হইয়াছে। ই,পি,আই,ডি,সি, রেলওয়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ এজেন্সীসমূহ প্রাদেশিক সরকারের হাতেই ন্যস্ত করা হইয়াছে। এ দেশের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের যে একটি মাত্র ক্ষমতা রহিয়াছে তাহা হইতেছে প্রাদেশিক গভর্নরের নিযুক্তি। তিনি বলেন, এই ক্ষমতাও কেন্দ্রীয় সরকারের হাত হইতে লইয়া যাওয়া হয়, তাহা হইলে দেশের দুইটি অংশ একে অপর হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িবে। প্রেসিডেন্ট আরও বলেন যে, যাহারা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে চেচামেচি করিতেছে তাহারা প্রকৃতপক্ষে দেশের দুইটি অংশের বিচ্ছিন্নতা কামনা করে। কিন্তু প্রকাশ্যে এই কুমতলব স্বীকার করার মতো সৎসাহস তাহাদের নাই। এই জন্যই জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করিতেছে।

বিপর্যয় সৃষ্টি হইবে

 তিনি এই মর্মে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন যে, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে শাসনতন্ত্রে কোন পরিবর্তন সাধন করা হইলে বিপর্যয় সৃষ্টি হইবে। তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানীদের ভালবাসা ও বন্ধুত্ব কামনা করে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান অগ্রাধিকার লাভ করিতেছে বলিয়া প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই প্রদেশ বর্তমানে বার্ষিক ২ শত টাকা লাভ করিতেছে, কিন্তু সসামরিক শাসনপূর্ব কালে ইহার ৬ কোটি টাকা ব্যয় করার ক্ষমতাও ছিল না। কাজেই এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি পূর্ব পাকিস্তানীর কর্তব্য হইতেছে নিজেকে আরও খাঁটি পাকিস্তানী হিসাবে প্রমাণ এবং জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা প্রদান।

বিস্ময়কর অগ্রগতি

 প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন যে, ৮ বৎসর পূর্ব পাকিস্তান শিল্প ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করিয়াছে। বিস্ময়কর অর্থনৈতিক অগ্রগতির দরুন পাকিস্তান বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সামরিক শাসনের পূর্বে দেশ চরম অবনতির গহবরে পতিত ছিল। দেশে তৎকালে কোন উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় নি। রাজনীতিকরা শুধু ক্ষমতার দ্বন্দ লইয়াই ব্যস্ত ছিলেন।..........