পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

297 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড উপরোক্ত দাবীতে এই সব দল পৃথক পৃথকভাবে যতই আন্দোলন করিতেছে ততই স্বৈরাচারী সরকার এক একটি দলের উপর নির্যাতন চালাইয়া, কর্মী ও নেতাগণকে বিনা বিচারে বন্দী করিয়া, কোন কোন দলকে বে-আইনী ঘোষণা করিয়া একে একে বিরোধী দলসমূহকে দুর্বল করিবার চেষ্টা করিতেছে। ফলে এই সব বিচ্ছিন্ন আন্দোলন দ্বারা ডিক্টেটর শাসন দিন দিন আরও মজবুত হইবার সুযোগ পাইতেছে। এই কথা উপলব্ধি করিয়াই গণতন্ত্রকামী ৫টি বিরোধী দল তাঁহাদের বিভিন্ন-দফা দাবীর ভিত্তিতে “৮ দফা কর্মসূচী” প্রণয়ন করিয়া ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের যাবতীয় অধিকার আদায় করার বলিষ্ঠ শপথ গ্রহণ করিয়াছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ব্যতীত মুক্তির কোন পথই যে নাই তাহা সকলেই স্বীকার করিতে বাধ্য। এই স্বীকৃতির ফলেই জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহে বিরোধী দলের সদস্যগণ তাঁহাদের দলীয় কর্মসূচীর বিভিন্নতা সত্ত্বেও একজোট হওয়া অপরিহার্য বলিয়া বিবেচনা করিয়াছেন। যেসব দল আইন সভার ভিতরে ঐক্যবদ্ধ হইতে বাধ্য হইয়াছে তাঁহাদের পক্ষে জনগণের ময়দানে বিভিন্ন থাকাই অস্বাভাবিক। গণতন্ত্রের প্রতি যাহাদের নিষ্ঠা রহিয়াছে তাঁহাদের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক শিবির হইতে বিচ্ছিন্ন থাকা সম্পূর্ণ অসম্ভব। ৮ দফার সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ৮-দফা সকল দলের বিভিন্ন দফার ভিত্তিতে রচিত হইলেও কোন দলেরই সমস্ত দফা ইহাতে সামিল হইতে পারে নাই। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দল এত সব দফা পেশ করিয়াছে সেই উদ্দেশ্যে ৮-দফা দ্বারা পূর্ণ হইবে মনে করিয়াই তাঁহারা সর্বসম্মতভাবে এই নূন্যতম কর্মসূচীর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর প্রত্যেক দলেরই নিজ দফাসমূহের বাকী অংশের জন্য আন্দোলন করিবার অধিকার রহিল। বিভিন্ন দলের দফাসমূহকে বিষয় ভিত্তিতে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। ১।রাজনৈতিক ২সামরিক ৩।অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিষয় এই কথা অস্বীকার করিবার উপায় নাই যে, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের উপরই অন্যান্য সমস্যার সমাধান নির্ভর করে। সামরিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানও রাজনৈতিক পন্থায় করিতে হইবে। সামরিক বিষয় পূর্ব পাকিস্তানকে সামরিক দিক দিয়া স্বয়ংসম্পূর্ণ করিবার জন্য বিভিন্ন দল যত দাবী পেশ করিয়াছে তাহার সবগুলিই ৮-দফা কর্মসূচীর ৪র্থ দফায় শামিল করা হইয়াছে। উপরন্তু এই দফাটিকে আরও কার্যকরী করিবার জন্য ৭ম দফায় ডিফেন্স কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে।