পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

298 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক বিষয় পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন কায়েম, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, সর্বক্ষেত্রে সংখ্যাসাম্য প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য ২য়,৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ দফাসমূহে বাস্তব ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে। জাতীয় সংহতি বজায় রাখিয়া ইহার চেয়ে বলিষ্ঠ কোন কর্মসূচী প্রণয়ন সম্ভব কিনা তাহা দেশবাসীরই বিবেচ্য। ৮-দফার বৈশিষ্ট্য ১। ২য় দফা হইতে ৮ম দফা পর্যন্ত ৭ টি দফায়ই শুধু পূর্ব পাকিস্তানের দাবী সম্বলিত হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ ইহাতে স্বাক্ষর করায় এই আঞ্চলিক দাবীসমূহ এখন জাতীয় দাবীতে পরিণত হইয়াছে। ২। সংখ্যাসাম্য নীতি স্বীকৃতি হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত যে সব কারণে বৈষম্যের প্রতিকার হয় নাই সেই সব কারণ দূর করিবার উদ্দেশ্যে এই কর্মসূচীতে একটি বিশেষ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে। কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তে ন্যস্ত প্রত্যেকটি বিষয়ে সংখ্যাসাম্য নীতি বাস্তবায়িত করাইবার জন্য উভয় প্রদেশের সমান সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে এক একটি বোর্ডের উপর দ্বায়িত্ব অর্পণ করা হইয়াছে। আরও উল্লেখযোগ্য যে বোর্ডসমূহে পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিগণকে জাতীয় পরিষদ পূর্ব পাকিস্তানী সদস্যগণই নির্বাচন করিবেন। ৩। পূর্ব পাকিস্তানের দাবীসমূহ লইয়া শুধু পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন হইলে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ ইহাকে ঐ প্রদেশের বিরুদ্ধে এই প্রদেশের বিদ্বেষ মনে করিতে পারেন। কিন্তু ৮-দফা একটি জাতীয় কর্মসূচীতে পরিণত হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানেও এই সব দাবীর পক্ষে জনমত সংগ্রহ করা সম্ভব হইবে। এইরূপে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে একই ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ দ্বারা জাতীয় সংহতিকে মজবুত করা যাইবে। ঐক্যের স্থায়িত্ব বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঐক্য সম্পর্কে আজ পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতা হইয়াছে তাহাতে এই ধরনের ঐক্যের স্থায়িত্ব সম্পর্কে কোন কোন মহল হইতে সন্দেহ প্রকাশ করা হইয়া থাকে। সেই দিক লক্ষ্য করিয়াই পিডিএমকে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন ত্রটি হইতে মুক্ত রাখিবার সুব্যবস্থা করা হইয়াছে। যে উদ্দেশ্যে এই ঐক্যজোট গঠিত হইয়াছে তাহা হাসিল না হওয়া পর্যন্ত যাহাতে ঐক্য বজায় থাকে সেই দিকে লক্ষ্য রাখিয়াই নিম্নরূপ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইয়াছে। ১। বিগত সম্মিলিত বিরোধী দলের (কপ) ন্যায় পিডিএম নির্বাচনের উদ্দেশ্যে গঠিত হয় নাই। সম্মিলিতভাবে গণআন্দোলন পরিচালনার উদ্দেশ্যেই পি ডি এমের সৃষ্টি। ২। পূর্বে সম্মিলিত দলের (কপ) সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় যে কোন অংগদল ভেটো প্রয়োগ করিতে পারিত। কিন্তু পিডিএম সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারবে। অংগদলসমূহের কোন ভেটো ক্ষমতা নাই। ৩। পূর্বে সম্মিলিত সংস্থায় (কপ) কর্মকর্তাগণ দলীয় ভিত্তিতে নির্ধারিত হইতেন। কিন্তু পি ডি এমের কাঠামোকে একটি সুসংবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের ন্যায় গঠন করার ফলে ইহার কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ হইতে নিম্নতম শাখা কমিটি পর্যন্ত সর্বস্তরেই বৎসরে একবার নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে কর্মকর্তা নিযুক্ত হইবেন। ৪। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পি ডি এম যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে তা অংগদলগুলি মানিয়া লইতে বাধ্য থাকিবেন।