পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

301 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ন্যাপের বিশেষ অধিবেশনে মওলানা ভাসানী কর্তৃক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির | ৩০ নভেম্বর, ১৯৬৭ আন্দোলনের কর্মসূচী পেশ পুস্তিকা রংপুরে অনুষ্ঠিত ন্যাপের বিশেষ অধিবেশনে উপলক্ষে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অভিভাষণ রংপুর শহর, ৩০শে নভেম্বর, ১৯৬৭ সাল সমাগত কাউন্সিলার বন্ধুগণ, এক কঠিন রোগ ভোগের পর আজ আপনাদের সামনে উপস্থিত হইতে পারিয়া আমি সত্যিই আনন্দিত। অসহ্য যন্ত্রণাময় সেই দিনগুলিতে বার বার এই কথাই আমার মনে হইয়াছিল হয়ত আর একবার শেষবারের মত আপনাদের সাথে মিলিত হইতে পারিব না। কিন্তু পরম করুনাময় আল্লাহতালার অপার দোয়া এবং আমার প্রতি আপনাদের অসীম ভালবাসা এবারও আমাকে মৃত্যুর পথ-যাত্রা হইতে ফিরাইয়া আনিয়াছে। জানি না আবার ভবিষ্যতে এমনি একটা মহতী সমাবেশে আমি আপনাদের সহিত মিলিত হইতে পারিব কিনা। দেশবাসীর প্রতি আপনাদের প্রগাঢ় ভালবাসার প্রতি অবিচল আস্থা নিয়াই হয়ত এই শেষবারের মত আপনাদরে সামনে আমি হাজির হইয়াছি। আপনাদের অকুণ্ঠ দেশপ্রেমের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ সালাম আপনারা গ্রহণ করুন। বন্ধুগণ! আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এক গভীর সংকটময় মুহুর্তে আপনারা আজ এখানে সমবেত হইয়াছেন। আমাদের সংকট যতই গভীর এবং ব্যাপক হউক না কেন, জাতীয় জীবনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অন্তদৃষ্টি এবং বিশ্বজোড়া পরিসরে সুপ্রসারিত স্বচ্ছ দৃষ্টি লইয়া আন্তর্জাতিক প্রতিটি সমস্যার বিচার বিশ্লেষণ করিয়া আপনাদের কর্তব্য নির্ধারণে আপনারা যে সক্ষম এই বিশ্বাস আমার আছে। আপনাদের সুগভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রতি প্রগাঢ় আস্থা রাখিয়াই আজ আমি আপনাদের সামনে কয়েকটি কথা উপস্থিত করিতে চাই। এক সর্বগ্রাসী গভীর সংকট আমাদের দেশ আজ এক বর্ণনাতীত সর্বগ্রাসী সংকটে নিমজ্জিত। স্বাধীনতা লাভের পর বিগত বিশটি বছর ধরিয়া একটানা ক্রমবর্ধমান গতিতে সংকট বৃদ্ধি পাইয়া স্তুপীকৃত সংকট দেশবাসীকে আকণ্ঠ নিমজ্জিত করিয়াছে। কৃষককুলের অবস্থা সংকটগ্ৰস্ত দুস্থ জনতার কথা উল্লেখ করিতে হইলে সর্বপ্রথম উল্লেখ করিতে হয় আমাদের শোষিতনিপীড়িত-বঞ্চিত কৃষক সমাজের কথা। দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৮২ জন লইয়া যে কৃষক সমাজ, তার জীবনে বিগত ২০ বছর কি আনিয়াছে? মনে পড়ে সামরিক শাসনামলের গোড়ার দিকে এই প্রদেশের জনৈক গর্ভনরের তেজগাঁও বিমানবন্দরের একটি কথা। করাচী থেকে প্রত্যাগত গর্ভনর বাহাদুর সাংবাদিকদের এক “চারিদিকে আমি দেখিতেছি এক প্রাচুর্যের সমারোহ”। সামরিক শাসকদেরহ কয়েদখানায় বন্দী অবস্থায় থাকিয়া সেদিন এই কথাগুলিই সেই গর্ভনরকে ডাকিয়া বলিতে ইচ্ছা হইয়াছিলঃ