পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

303 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড দেশের গণতন্ত্রকামীদের যে অংশ পূর্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের বন্ধু মনে করিতেন বর্তমানে তাহারা সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে কিছুটা নিরপেক্ষতার ভাব দেখান। এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ক্ষেত্রে মার্কিন বিরোধিতার প্রসঙ্গটি অবতারণা করিয়া তাহারা মার্কিনদের বিরাগভাজন হইতে চান না। তাই তাহারা প্রস্তাব করেন- আগে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাক তারপর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার প্রসঙ্গটি বিবেচনা করা যাইবে। কাজেই প্রশ্ন দেখা দিয়াছে- কোন কাজটি আগে করিতে হইবে? গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা , না সাম্রাজ্যবাদের বিতাড়ন? আমার মতে প্রশ্নটিকে এইভাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায় না। গণতন্ত্রের সংগ্রাম এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম এক এবং অবিভাজ্য। কেননা আমি ইতিপূর্বেই আলোচনাতে দেখাইয়াছি যে আমাদের দেশের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ এবং দেশী বড় পুঁজি ও সামন্তবাদী স্বার্থ একই সূত্রে গ্রথিত। দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির আতাতকে যেমন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখা যায় না তেমনি এই আতাতের বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগ্রামকে ও দুই অংশে ভাগ করা যায় না। ইহাদের একটির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে গেলে সেই সংগ্রামে অপরটিও জড়িত হইয়া পড়িতে বাধ্য। অতএব গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম এক এবং অবিভেজ্য। আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নেঃ ন্যাপের সাথে মতপার্থক্যের উল্লেখ করিতে যাইয়া আমাদের বন্ধুরা বলিয়াছেনঃ বিরোধিতা করিয়াছে।” বন্ধুদের এই অভিযোগে হাসি সম্বরণ করা সত্যি কঠিন। পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগণের স্বাধিকারসহ পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী পররাষ্ট্র নীতির দাবীতে যে ন্যাপের জন্ম সেই ন্যাপ স্বায়ত্তশাসন দাবীর বিরোধিতা করিতেছে, ইহার চাইতে হাস্যকর কথা আর কি হইতে পারে? তবে এ কথা সত্য যে, আমাদের বন্ধুদের ন্যায় ন্যাপ দেশের জনসংখ্যার শতকরা ১ ভাগেরও কম উদীয়মান বাঙ্গালী বুর্জোয়া শ্রেণীর স্বার্থের প্রতিফলন যে ৬- দফা, তাহাকে “জাতীয় মুক্তিসনদ’ হিসাবে আখ্যায়িত করিয়া স্বায়ত্তশাসনের নামে জনতাকে বিভ্রান্ত করিতে চায় নাই। স্বায়ত্তশাসন বলিতে ন্যাপ দেশের কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত তথা শতকরা ৯৮জন মেহনতী মানুষের স্বায়ত্তশাসনই বুঝিয়াছে এবং তার ১৪-দফা কর্মসূচী মারফত দেশবাসীর সামনে তাহদের করণীয় তুলিয়া ধরিয়াছে। আমাদের বন্ধুরা বলিয়াছেন যে, “তাহারা মনে করেন ৬-দফা কর্মসূচী লাহোর প্রস্তাব ও ২১-দফা কর্মসূচীর ১৯ দফার সহিত সঙ্গতিপূর্ণ।” বেশ ভাল কথা। এক্ষেত্রে তাহদের উদ্দেশ্যে এক প্রশ্ন করিতে চাই। ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যখন ১৪-দফা কর্মসূচী গৃহীত হয় তখন তাহারা উক্ত ১৪-দফা কর্মসূচীকে লাহোর প্রস্তাব ও ২১-দফা কর্মসূচীর ১৯নং দফার সহিত সঙ্গতিপূৰ্ণ মনে করিয়াই উহার সহিত একমত হইয়াছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাহারা এই ১৪-দফার মধ্যে কি কি অসঙ্গতি আবিষ্কার করিলেন? এবং কেনই বা আজও সে সম্পর্কে তাঁহারা নীরব রহিলেন? বন্ধুগণ আসল কথা হইতেছে এই যে, আমাদের বন্ধুরা হইতেছেন উদীয়মান বাঙ্গালী বুর্জোয়া শ্রেণীর তভূ। পাকিস্তানের একচেটিয়া পুঁজিপতি গোষ্ঠীর সহিত আমাদের বাঙ্গালী পুঁজিপতি গোষ্ঠীর অন্তদ্বন্দকে “৬দফার” নামে স্বায়ত্তশাসনের লেবাস পরাইয়া তাহারা হাজির করিয়াছেন। আমার সুস্পষ্ট অভিমত হইতেছে হইয়া থাকে তবে স্বায়ত্তশাসনের নামে বাংলার কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষ কোনদিনই তার জন্য বুকের রক্ত ঢালিতে যাইবে না। কেননা, যে ৬-দফা কর্মসূচীতে বাংলার কৃষক-শ্রমিক তথা মেহনতী মানুষের অধিকারের কোন