পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

374 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড ১৯৬৭ সালের ২৮শে মার্চ অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের এই বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে কমিটিকে বলা হয় যে, কমিটি তাদের মত প্রণয়নের সময় বাংলা একাডেমী ও অনুরূপ সংস্থাসমূহ এক্ষেত্রে যে কাজ করেছেন তাকে বিবেচনা করার জন্য বলা হয়। গত ডিসেম্বরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ কমিটির বৈঠকসমূহে সভাপতিত্ব করেন। এ বছরের ২২ শে মার্চ রেজিস্টার তিনজন সদস্যের বিরোধী মন্তব্যসহ কমিটির রিপোটটি পান। বিরোধী সদস্যত্রয় হলেন, জনাব এম, আবদুল হাই, জনাব মুনীর চৌধুরী, ডঃ এনামুল হক। ৪ঠা মে রিপোটটি একাডেমিক কাউন্সিলে পেশ করা হয়। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে রিপোট এবং বিরোধী বক্তব্যের কপি সব সদস্যকে সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অতঃপর ৩রা আগষ্ট একাডেমিক কাউন্সিল কিছু সংশোধন ও রদবদলের পর নীতিগতভাবে রিপোটটি গ্রহণ করেন। এর বিস্তারিত প্রয়োগের ব্যাপারটি ঠিক করার জন্য অপর একটি কমিটি নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ফ্যাকাল্টি অব আর্টস এবং ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের উীন পূর্ব পাকিস্তানের ডি,পি,আই, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ জনাব ওসমান গনি, অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খা, জনাব নুরুল মোমেন এবং ডঃ কাজী দীন মোহাম্মদ এই কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। কাউন্সিল কমিটির রিপোটটি যেভাবে গ্রহণ করেছেন তাতে বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের কোন প্রশ্নই ওঠে না। বানানের সুবিধার জন্য শুধু কয়েকটি অক্ষর বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অক্ষরগুলো হলো ওঁ, ণ,ৎ, ষ, ঈ, ঐ, ঔ। এগুলো বাদ দিলে কোমলমতি বালক-বালিকাদের পাঠ গ্রহণে যে বিরাট সুবিধা লাভ করবে সেটাই কাউন্সিলের সামনে ছিল। বর্ণমালার ঐ সব বাড়তি অক্ষর শিক্ষার প্রসারে বাধা সৃষ্টি করেছে। কাউন্সিল একটি বহুল প্রচলিত প্রয়োগ বাংলা একাডেমী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ, অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খা এবং অন্যান্যের সুপারিশ ও প্রস্তাবকে আইনসিদ্ধ করতে চেয়েছেন। পরিতাপের বিষয়, দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি সহজ-সরল উদ্যমের ভুল ব্যাখ্যা দান করা হয়েছে। অসুখের জন্য ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ এত স্বাক্ষর দিতে পারেন নি। অথচ এক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ নাকি এরূপ সংস্কারের বিরোধী। আগেই বলা হয়েছে ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহর কথা অনুযায়ী এই কমিটি নিয়োগ করা হয়। তিনি কমিটির বিভিন্ন সভায় রিপোটে উল্লিখিত মর্মে ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ সুপারিশ গ্রহণের জন্য জোর সংগ্রাম চালান। একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যগণ দায়িত্বশীল শিক্ষাবিদ। তাঁরা বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন কলেজের প্রতিনিধিত্ব করছেন। শিক্ষার সাথে যুক্ত এবং আগ্রহী বিশিষ্ট ব্যক্তিগণই কাউন্সিলের সদস্য। একাডেমিক কাউন্সিলের যে সভায় রিপোটটি গৃহীত হয় তাতে উপস্থিত ৫০ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ২ জন সদস্য অধ্যাপক আবদুল হাই এবং আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ এ,কে,এম, কবির বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে এই যুক্তিতে রিপোটের প্রস্তাবগুলোর বিরোধিতা করেন। গোটা একাডেমিক কাউন্সিল বাংলা ভাষার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে, এ অভিযোগ দ্বারা সদস্যদের দেশপ্রেম ও উদ্দেশ্যও সত্যতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে।