পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

376 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ বর্ণমালা সংস্কারের প্রতিবাদে ৪২ জন দৈনিক পাকিস্তান ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৮ বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি ৪২ জন বুদ্ধিজীবীর বিবৃতিঃ বর্ণমালা সংস্কারের সমালোচনা গতকাল শনিবার ঢাকায় ৪২ জন সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ, শিল্পী ও সাংবাদিক এক যুক্ত বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে গৃহীত বাংলা বর্ণমালা লিখনরীতি ও বানান সংস্কার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তারা বলেন যে, প্রস্তাবিত পরিবর্তন গ্রহণ করা হলে হাজার বছরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সাথে আমাদের স্বাভাবিক সম্পর্ক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়বে, শব্দ তার পূর্বতন ব্যবহার ও ব্যুৎপত্তিগত ভাবার্থেও অনুষঙ্গ হারিয়ে ফেলবে, কবিতার ছন্দ প্রকরণের নিয়মাদি বিপর্যস্ত হবে এবং ভাষাকে ব্যাকরণের সূত্র করায় বর্ণনা করা দুঃসাধ্য হবে, এছাড়াও সৃজনশীল সাহিত্যের ক্ষেত্রে এক নিদারুন বন্ধ্যাতৃ দেখা দেবে এবং ভাষা ও সাহিত্য পঙ্গু হয়ে পড়বে। ধ্বনি বিজ্ঞানের বিচারেও বাংলা বর্ণমালা অত্যন্ত সুষ্ঠভাবে বিন্যস্ত বলে স্বীকৃত। এই সংস্কার এর বিজ্ঞান ভিত্তিকেও নষ্ট করবে। তারা বলেন, জনশিক্ষার প্রসারের অজুহাতে লিখন পদ্ধতির পরিবর্তন সাধন জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার কৌশলমাত্র। তারা বলেন, ভাষা ও বর্ণমালার প্রকৃত মালিক দেশের জনসাধারণ, তাদের অগোচরে এর মৌলিক পরিবর্তন সাধনে কতিপয় ব্যক্তির অধিকারই নেই। বিবৃতিকারীরা এই সংস্কার প্রত্যাখানের জন্য দেশবাসীর নিকট আবেদন জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন যে, কেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এককভাবে ভাষার এরূপ সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন সাধনে উদ্যোগী হয়েছেন তা জানা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল আজ অবধি তাদের প্রস্তাবিত সংস্কারের পূর্ণ বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশ করেন নি। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, জনসাধারণের অজান্তেই টেক্সট বুক বোর্ডের মাধ্যমে তাঁরা প্রস্তাবিত বর্ণমালা ও বানান পদ্ধতি শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যকরী করতে অগ্রসর হয়েছেন। যতদূর জানা যাচ্ছে তাতে মনে হয়, বর্ণমালা হতে তারা ঈ, উ, ঐ, ঔ,ঙ, ণ, ষ, এর ঈ-কার, উ-কার, ঐ-কার ঔ-কার ইত্যাদি বর্জন, যুক্তবর্ণেও উচ্ছেদসাধন ব-ফলা , ম-ফলা, য-ফলা ইত্যাদির পরিবর্তে বর্ণ গ্রহণ শ-ষ, জ-য নবোদ্ভাবিত নিয়মে প্রয়োগ, এ-কার বর্ণের ডানদিকে আনয়ন, ঈ-কার দ্বার ই-কারের কাজ সাধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন যে, তথাকথিত সরলকরণের মাধ্যমে জনশিক্ষা প্রসারই যদি এই সংস্কারের উদ্দেশ্য হয় তাহলে আমাদের বক্তব্য এই যে (ক) প্রচলিত বর্ণমালা এবং বানান পদ্ধতি যে জনশিক্ষা প্রসারের অনুপযোগী তা প্রমাণ হয়নি। (খ) প্রস্তাবিত লিখনরীতি যে জনশিক্ষা প্রসারের মন্ত্রসিদ্ধ উপায়ের মত কার্যকরী হবে তারই বা নিশ্চয়তা কি? (গ) যে সকল রাষ্ট্র ব্যাপকভাবে জনশিক্ষা বিস্তারে সফলকাম হয়েছেন, তাঁরা ভাষা বা লিপি সংস্কারের দ্বারা ঐ কার্য সম্পন্ন করেন নি-জনশিক্ষা বিস্তারের প্রকৃত উপায় সর্বস্তরে অপরিহার্যরূপে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান, শিক্ষা পদ্ধতির উন্নতি সাধন এবং সকলের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এ সকল উপায় অবলম্বন না করে জনশিক্ষা প্রসারের অজুহাতে লিখন পদ্ধতির পরিবর্তন সাধন জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার কৌশলমাত্র।