পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

377 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একতরফাভাবে গৃহীত বর্ণমালা, বানান পদ্ধতি ও লিখন রীতি চালু হলে বর্তমানে যারা শিক্ষিত তাদের বেলায় এবং যতটুকু শিক্ষার প্রসার হয়েছে তার ক্ষেত্রেও মারাত্মক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। তাছাড়া ভাষা, সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার সৃষ্টি হবে। শিক্ষিতদের নূতন করে ভাষা লিখন ও পাঠ শিক্ষার ক্ষেত্রেও আরেকটি অতিরিক্ত সমস্যার সৃষ্টি হবে, যা দ্রুত অগ্রগতি সাধন তো দূরের কথা সাধিত অগ্রগতিকে অনেকাংশে ব্যাহত করবে। এর ফল বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালু করার প্রচেষ্টা সম্পূর্ণররুপে বানচাল হয়ে যাবে। বিবৃতিতে তারা বলেন যে, ব্যুৎপত্তি গত অর্থের সাথে সংগতি রেখে বাংলা শব্দ বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। শব্দগুলি এমন প্রতীক যা দেখামাত্রই ব্যুৎপত্তির ভাষানুষঙ্গে সে সর্বের মর্ম উপলব্ধি করা যায়। নূতন শব্দ সৃষ্টির সম্ভাবনাও এর ফলে উন্মোচিত থাকে। ভাষা সচল ও বিকাশমান থাকার পক্ষেও অত্যন্ত সহায়ক। আলোচ্য ংস্কার অনেক ক্ষেত্রেই শব্দকে ব্যুৎপত্তি হতে বিচ্ছিন্ন করিয়া ফেলিবে। ভাষা শিক্ষা জটিলতর হয়ে পড়বে এবং ভাষার সৃষ্টিশীলতা ও বিকাশমানতার ক্ষেত্রেও অন্তরায় দেখা দেবে। তারা আরো বলেন যে, কৃত্রিম হস্তক্ষেপের দ্বারা বর্ণমালা ও ভাষা সংস্কার সম্ভব নয়। ভাষা এবং লিখন প্রণালী আপন প্রবণতা অনুযায়ী নিজস্ব নিয়মে স্বাভাবিকভাবে বিবর্তিত হয়, বর্ণমালার সংস্কারদের এই সংগোপন প্রচেষ্টার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাই স্বাভাবিকভাবে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ডঃ কাজী মোতাহার হোসেন, জনাব আবুল হাশিম, জনাব মোঃ মনসুর উদ্দিন, সৈয়দ মুর্তাজা আলী, জনাব মোঃ নাসিরুদ্দিন, বেগম সুফিয়া কামাল, কাজী মোঃ ইদ্রিস, জনাব সিকান্দার আবু জাফর, জনাব সাইয়িদ আতিকুল্লাহ, আফলাতুন, মিসেস লায়লা সামাদ, শহীদ কাদরী, কালাম মাহমুদ, কে.জি.মোস্তফা, আতাউস সামাদ, আনোয়ার জাহিদ, আবদুল গাফফার চৌধুরী, জহির রায়হান, রোকনুজ্জামান খান, নূর জাহান বেগম, এহতেশাম হায়দার চৌধুরী, ফয়েজ আহমেদ, আলী আকসাদ, খালেদ চৌধুরী, ওয়াহিদুল হক, কাজী মাসুম, ইসহাক চাখারী, শওকত আলী মোঃ সালেহউদ্দীন, আবদুল আওয়াল, জামালউদ্দিন মোল্লা, গোলাম রহমান, আবু কায়সার, আহমদ নূরে আলম, শহিদুর রহমান। কবি জসীমউদ্দীন পৃথক এক বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে এই বানান সংস্কার হতে নিবৃত্ত থাকার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, তা না হলে জনগণের মধ্যে মারাত্মক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে দেশের শাসকবর্গের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ প্রদর্শিত হবে। তিনি বলেন যে, উ-কার, ঔ-কার এবং দুই ন,ণ এবং তিনটি শ, ষ, স-ও অত্যাচারে সারাজীবন আমাকে ভুগতে হয়েছে। যারা এখন বানান সংস্কার করতে চান, তাদের সাথে আমি কতকটা একমত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হরফ ও বানান সংস্কার মেনে নিলে আমাদের বংশধরদের এক চক্ষু অন্ধ করে দেওয়া হবে।