পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

387 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড গ্রহণের পর্যায়ে এলে তারা শোষণ অব্যাহত রাখার জন্য তাদের শাসন ব্যাবস্থাকে ক্রমেই অধিকতর সময়বাদি করে এবং এভাবে পূর্ববাংলার ওপর জাতীয় নিপীড়ন উপনিবেশ শোষণের রূপ নেয় এবং পূর্ববাংলা পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসকশ্রেনীর উপনিবেশে পরিণত হয়। এ উপনিবেশিক শাসক শ্রেণী নিজেরাই সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদেও স্বার্থ রক্ষা করছে। এ কারণে পাকিস্তান নিজেই একটি আধা-উপনিবেশিক ও আধা-সামন্তবাদী দেশ। এই পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসক শ্রেণী পূর্ববাংলার পাকিস্তানবাদী দালাল বুর্জোয়াদের মাধ্যমে এবং গ্রামে সামন্তবাদকে জীবিত রেখে এদেশে শাসন ও শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে। এ উপনিবেশিক শোষণের ফলে পূর্ববাংলার মাঝারী ও ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীর বিকাশ ব্যাহত হয়েছে এবং গ্রামে সামন্তবাদী শোষণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষতঃ বর্তমানে বিদেশী ঋণ পরিশোধের জন্য, বিদেশে ঋন হ্রাসের ফলে কলকারখানার পুঁজি সংগ্রহের জন্য গ্রাম্য শোষণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। কাজেই পূর্ববাংলার শ্রমিকঃ কৃষক, ক্ষুদে বুর্জোয়া ও মাঝারি বুর্জোয়া শ্রেণীর এক অংশ তথা সমগ্র পূর্ববাংলার জাতি এ শোষণে শোষিত। এ পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসক শ্রেণী অখন্ড পাকিস্তান, ধর্মের ভিত্তিতে এক জাতি, তথাকথিত ইসলামী সংস্কৃতি, পূর্ববাংলা একটি প্রদেশ প্রভৃতি প্রচারের মাধ্যমে শোষণের উপনিবেশিক চরিত্র গোপন করে । পৃথিবীর বিভিন্ন উপনিবেশিক চরিত্র গোপন করে। পৃথিবীর বিভিন্ন উপনিবেশিক শক্তি শোষণের উপনিবেশিক চরিত্র গোপন করার জন্য এক দেশ, এক জাতি প্রভৃতি প্রচারের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু ইতিহাস তার ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে। পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসক শ্রেণীর এই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হতে বাথ্য। দ্বিতীয়ঃ পূর্ববাংলার বিশাল কৃষক জনতার সাথে সামন্তবাদের দ্বন্দ্বঃ গ্রামে সরকারি কর্মচারি (পুলিশ, সার্কেল অফিসার), মৌলিক গণতন্ত্রী (বিডি), জমিদার, ধনীচাষী, অসৎ ভদ্রোলক (টাউট) ও মাঝারি চাষীর উপরের স্তর, গ্রামের ক্ষেতমজুর, গরীব চাষী ও মাঝারি চাষির ব্যাপক অংশের ওপর সামন্তবাদী শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানী উপনিবেশিক শ্রেণী গ্রামের সামন্তবাদীদের জিইয়ে রেখেছে এবং তাদের বিকাশের সর্বময় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ শাসক শ্রেণী তাদের বিকাশের নিমিত্ত পুঁজি ও সস্তা শ্রমশক্তি সংগ্রহের জন্য সামন্তবাদী শোষণ তীব্রতর করছে। গ্রামে সামন্তবাদী শোষণের প্রকাশ হলো ভূমিকর ও অন্যান খাজনা বৃদ্ধি, গ্রামে রেশন চালু না করা, বুনিয়াদী গনতন্ত্র সৃষ্টি করা, ঋণ প্রভৃতির মাধ্যমে চাষীদের শৃংখলে আবদ্ধ করা, বন্যা নিয়ন্ত্রন না করা, সেচ প্রকল্প কার্যকরি না করা, বিভিন্ন ধরনের ইজারাদারী প্রথা, পোকা ধ্বংশের ব্যবস্থা না করা, অবৈতনিক সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না করা, বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যাবস্থা না করা প্রভৃতি। তৃতীয়ঃ (ক) পূর্ববাংলার জনগণের সাথে সাম্রাজ্যবাদ বিশেষতঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের জাতীয় দ্বন্দ্বঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ একদিকে পাকিস্তানী উপনিবেশবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রাখছে, অন্যদিকে পূর্ববাংলার বুর্জোয়াদের এক অংশের সাথে আঁতাত রাখছে এবং তাদের মাধ্যমে পাকিস্তানী শাসকশ্রেণীর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তারা ঋণ, প্রতক্ষ ব্যবসায় প্রভৃতির মাধ্যমে পূর্ববাংলার জনগণকে শোষণ করছে। তারা পাকিস্তানী উপনিবেশবাদী ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের নিয়ে চীন বিরোধী কমিউনিষ্ট বিরোধী ঐক্যজোট গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তানী উপনিবেশবাদীরা নিজেদের স্বার্থেই ভারতীয় সম্পসারণবাদের সাথে বর্তমানে আঁতাত করতে পারছে না এবং নিজেদের শ্রেণী বিকাশের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে এসে সমাজতান্ত্রিক দেশ বিশেষতঃ চীনের সাথে বন্ধুত্ব করতে বাধ্য হচ্ছে।