পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

388 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড অন্যদিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পূর্ববাংলার উপনিবেশিক শাসন ও শোষণের সুযোগে নিয়ে তাদের সমর্থক পূর্ববাংলার বুর্জোয়াদের সাহায্য ও সমর্থন করছে। সাম্রাজ্যবাদ সমর্থক এই দালাল বুর্জোয়ারা উপনিবেশিক শাসন বিরোধী আন্দোলন করছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এ আন্দোলনকে মূলধন করে দুইভাবে ব্যবহার করছে- একদিকে পাকিস্তানী উপনিবেশবাদীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে চীন বিরোধী পাক-ভারত যৌথ চুক্তি সম্পাদন করার জন্য; অন্যদিকে এই দালাল বুর্জোয়াদের দ্বারা পূর্ববাংলাকে বিচ্ছিন্ন করে চীন বিরোধী পূর্ববাংলা-ভারত যৌথ চুক্তি সম্পাদন ও পূর্ববাংলাকে প্রত্যক্ষ মার্কিন উপনিবেশে পরিণত করার যখন ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। বর্তমান মার্কিন সমর্থক পূর্ববাংলার দালাল বুর্জোয়ারা ছয় দফা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে করছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এদেশের সামন্তবাদীদের স্বার্থ রক্ষাকারী ধর্মীয় পাটিগুলোকে সাহায্য ও সমর্থন করছে। এরা সাম্রাজ্যবাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র। (খ) পূর্ববাংলার জনগণের সাথে সংশোধনবাদ, বিশেষতঃ সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের জাতীয় দ্বন্দ্বঃ পাকিস্তানী উপনিবেশবাদীদের নিয়ে চীন বিরোধী, কমিউনিষ্ট বিরোধী ঐক্যজোট প্রতিষ্ঠার জন্য তারা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম তারা সমর্থন করে না। কারণ পাকিস্তানী উপনিবেশবাদীদের সাথে আতাঁত রেখে পাকিস্তানসহ তার উপনিবেশকে শোষণ করাই তাদের লক্ষ্য। এই জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম নস্যাৎ করার জন্য তারা পাকিস্তানী উপনিবেশবাদীদের সাহায্য করবে যাতে পূর্ববাংলাকে শোষণের একটা ভাগ তারা পায়। প্রসঙ্গক্রমে বায়াফ্রা, বামা, ভিয়েতনাম ও অন্যান্য দেশের কথা উল্লেখযোগ্য। বায়াফ্রার জনগণ সংগ্রাম করছে জাতীয় অত্যাচার, নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তির জন্য। সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদীরা নাইজেরীয় সামরিক সরকারকে অস্ত্র, অর্থ ও লোক সরবরাহ করে বায়াফ্রার জনগণের মুক্তি সংগ্রামকে ধ্বংস করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যাতে তারা সমগ্র নাইজেরিয়ায় সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণ চালাতে পারে। তারা বাৰ্মার মুক্তি সংগ্রামক দাবিয়ে রাখার, ভিয়েতনামের মহান সংগ্রামকে মুছে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। (গ) পূর্ববাংলার জনগণের সাথে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের জাতীয় দ্বন্দ্বঃ ভারতীয় বৃহৎ পুজীবাদী ও সামন্তবাদী সরকার সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমর্থন করবে না। কারণ তার উদ্দেশ্য হলো বুর্জোয়ার নেতৃত্বে স্বাধীন পূর্ববাংলাকে শোষণ করা এবং চীনবিরোধী, কমিউনিষ্ট বিরোধী একটি মিত্র পাওয়া। কিন্তু সর্বহারার নেতৃত্বে যুক্ত পূর্ববাংলা সহায়ক হবে আসাম, পশ্চিম বাংলা, বিহার, ত্রিপুরা তথা সমগ্র ভারতের শ্রমিক-কৃষকের মুক্তির। এ কারণে ভারতের সম্প্রসারণবাদ শ্রমিক-কৃষকের পূর্ববাংলা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বানচাল করার চেষ্টা করবে। চতুর্থ পূর্ববাংলার বুর্জোয়াদের সাথে শ্রমিক শ্রেণীর দ্বন্দ্বঃ পূর্ববাংলার বুর্জোয়া শ্রেণী শ্রমিকদের শোষণ করে এবং এদের মাঝে একটি অংশ পাকিস্তানী উপনিবেশবাদীদের দালাল হয়ে পূর্ববাংলাকে শোষণ করছে। অপর অংশ সাম্রাজ্যবাদ বিশেষতঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল। একটি অংশ সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ উভয়েরই বিরোধী সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদীরা, যারা সত্যিকার জতীয় বুর্জোয়া। পূর্ববাংলার বুর্জোয়াদের প্রথম অংশ দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক। দ্বিতীয় অংশ সাম্রাজ্যবাদের দালাল যারা ভারতের সাথে আতাত রেখে নিজস্ব শ্রেণী বিকাশের জন্য যতটুকু অধিকার প্রয়োজন তার জন্য সংগ্রাম করতে ইচ্ছুক। পূর্ববাংলার বুর্জোয়াদের ব্যাপক অংশ বর্তমানে এদের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ। এদের নেতৃত্বে জাতীয় সংগ্রাম কখনো সম্পূর্ণ হতে পারে না। এদের সাথে জনগণের শত্রুতার সম্পর্ক ছাড়াও তারা যতক্ষণ পাকিস্তানী