পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খণ্ড
406

 সম্পদের ব্যবধান প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। জনসাধারণ দ্রব্যাদির অগ্নিমূল্য এবং অসহনীয় মুদ্রাস্ফীতির অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছে।

 উপরক্ত সরকার দেশকে রক্ষার মত উপযুক্ত সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানকে রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

 সরকার এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করেছেন যে, তার ফলে দেশের সর্বত্র মানুষ তাদের ভাগ্য ও ভবিষৎ সম্পর্কে চরম হতাশার কবলে নিমজ্জিত হয়েছেন। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনে সব কিছুর প্রতি বিরাগ বিতৃষ্ণা, ঔদাসীন্য এবং অক্ষমতা বাসা বেঁধেছে।

 এই চরম জাতীয় বিপর্যয়ের পটভূমিতে উপরোক্ত গলদগুলো দূর করার এবং পাকিস্তানের আদর্শের বাস্ত বতায় এবং মূল্যবোধ উদ্ধোধনের জন্য এই আটটি দল পাকিস্তানে পূর্ণাংগ গণতন্ত্র ও জনগণের পূর্ণ রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার দৃঢ় এবং দ্ব্যর্থহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তারা দেশে (ক) ফেডারেল প্রকৃতির পার্লামেণ্টারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম, (খ) প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচন, (গ) অবিলম্বে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, (ঘ) পূর্ণ নাগরিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। সমস্ত কালাকানুন বিশেষ করে বিনা বিচারে আটক রাখার আইন ও বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স বাতিল, (ঙ) খান আব্দুল ওয়ালী খান, শেখ মুজিবুর রহমান, জুলফিকার আলী ভুট্টোসহ সকল রাজনৈতিক বন্দী, রাজনৈতিক কারণে জারীকৃত সব গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহার, (চ) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারার আওতায় জারীকৃত সকল নির্দেশ প্রত্যাহার, (ছ) শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, (জ) নতুন ডিক্লারেশেন দানের উপর আরোপিত বিধিনিষেধসহ সংবাদপত্রের ওপর জারীকৃত সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ইত্তেফাক, চাতন, প্রগ্রেসিভ পেপারস লিমিটেডসহ সকল বাজেয়াপ্তকৃত কিংবা ডিক্লারেশনে বাতিলকৃত প্রেস পত্রিকা এবং সাময়িকী তাদের আদি মালিকের কাছে প্রত্যাবর্তনের দাবী করছেন।

 এই দলিল স্বাক্ষরদানকারী দলগুলো আরো ঘোষণা করছে যে, একটি বাধাহীন এবং পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির উপরোক্ত শর্তসমূহ বাস্তবায়িত না হলে বর্তমান স্বেচ্ছাচারী এবং অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত নির্বাচন হবে জনগণের সাথে জালিয়াতির সামিল। তার প্রেক্ষিতেই তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং জনসাধারণের প্রতি নির্বাচন বর্জন করার আহবান জানিয়েছেন।

 ঘোষণায় সর্বশেষে বলা হয়, বর্তমানে সারা দেশে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান নিঃসন্দেহে এটাই প্রমাণ করে যে জনসাধারণ ঐ ডিক্টেটারী শাসন চায় না। তাদের নিশ্চিত ও দৃঢ়বিশ্বাস স্বৈরাচার ও জুলুমের শাসন খতম না হওয়া পর্যন্ত বর্তমানের অগণতান্ত্রিক আন্দোলন থামবে না। দলিল স্বাক্ষর দাতাগণ তাদের নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে বলেন, আমরা ও আমাদের পার্টি স্বদেশপ্রেমের এই ঐতিহাসিক কর্তব্য পালনে কোন ত্যাগ স্বীকার পরাঙ‍খুখ হবে না এবং জনগণকে তাদের পূর্ণ সার্বভৌম ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এবং অবিলম্বে উপরোক্ত লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে সুশৃংখলা, সুসংগঠিত অহিংসা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।