পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

432 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড প্রত্যাহার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা কায়েম, সকল দমনমূলক আইন প্রত্যাহার করিয়া ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজিবী, ব্যবসায়ী প্রভৃতি সর্বশ্রেণীর জনগণের প্রাণের দাবী ও মুক্তির পথ ১১-দফা কায়েম না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবে। আজিকার এই সমাবেশ বর্তমানে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসান ঘটাইয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের সংগ্রাম চালাইবার শপথ গ্রহণ করিতেছে। রাজনৈতিক প্রস্তাব এই মহতী সমাবেশ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর বিবেচনার পরে এই অভিমত ব্যক্ত করিতেছে যে, দেশের বর্তমান সংগ্রাম ও গণঅভু্যত্থানের ফলেই আজ শাসকগোষ্ঠী জনগণ হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল হইয়া পড়িয়াছে। জনগণের অভু্যত্থান দমনের ক্ষমতা আজ সরকারের নাই। কেননা সমগ্র দেশবাসী আজ জীবন দিতে ঐক্যবদ্ধ ও প্রস্তত রহিয়াছেন। এই অবস্থার শাসক গোষ্ঠী গণদাবীর নিকট নতি স্বীকার করিয়া স্বৈরাচারী সরকারী কর্মকর্তাগণ কর্তৃক একদা দেশের বিকৃত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহিত গোল টেবিল আলোচনায় বসিবার প্রস্তাব উত্থাপন করিয়াছে। সরকার জরুরী আইন তুলিয়া দিতেও বাধ্য হইতেছেন। ইহা গণসংগ্রামেরই বিজয় এবং এইভাবেই আজ স্বৈরাচারী শাসন ধ্বসিয়া পড়িতে শুরু করিয়াছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হইতে হইবে। জনগনকে পূর্ণ ঐক্য ও সংগ্রাম মজবুত এবং অব্যাহত রাখিতে হইবে। এই জন্য আমরা দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হইতে আহবান জানাইতেছি। কেননা রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্য গণসংগ্রামের আরও শক্তি যোগাইবে ও স্বৈরাচারের উচ্ছেদ তুরান্বিত করিবে এবং ছাত্র সমাজের ১১-দফা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হইবে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের আন্দোলনের ঐক্য রক্ষার্থে এই সমাবেশ গভীর আরোপ করিতেছে। গোলটেলি বৈঠকের পূর্বশর্ত এই সমাবেশ আরও ঘোষণা করিতেছে যে, আরও দাবী আদায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিরোধী দলীয় নেতৃবর্গকে গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত হইতে দেওয়া হইবে না। এই জন্য অবিলম্বে (ক) জরুরী আইনে আটক সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি তুরান্বিত করিতে হইবে। (খ) অবিলম্বে শেখ মুজিব, ওয়ালী খান, মনিসিংহ, তাজউদ্দিন, আবদুল জব্বারসহ সকল নেতাকে মুক্তি দিতে হইবে। কেননা তাঁহারাই জনগণের দাবী প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কারারুদ্ধ হইয়াছেন; (গ) নিরাপত্তা আইনে আটক সকল রাজবন্দীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হইবে। নিরাপত্তা বন্দীদের পক্ষে বাবু মহথ দে, সন্তোষ বানার্জি গত ১০ বৎসর যাবৎ একটানা (সামরিক শাসনের সময় হইতে) নিরাপত্তা আইনে বন্দী রহিয়াছেন; (ঘ) দেশরক্ষা আইনে আটক ও রাজনৈতিক কারণে সাজাপ্রাপ্ত বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেনন ও মাহবুবুল হক দোলনসহ সকল ছাত্রবন্দীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হইবে। (ঙ) আগরতলা মামলাসহ সকল রাজনৈতিক মামলাসহ সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করিতে হইবে, (চ) শ্রী খোকা (পৃঃ৫) রায়, সুখেন্দু দস্তিদার, অনিল মুখাজী, মোঃ ফরহাদ, কাজী জাফর আহমেদ, নাসিম আলী, ফয়েজ উদ্দীন, আবদুস সাত্তার, সুনেন্দু কানুনগো, বরুণ রায় প্রমুখ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর হইতে হুলিয়া ও গ্রেফতারী পরোয়ানা অবিলম্বে প্রত্যাহার করিতে হইবে। (ছ) সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চয়তা দিতে হইবে। দেশ হইতে সকল দমনমূলক ব্যবস্থা ও সংখ্যালঘু অর্ডিন্যান্সসহ সকল কালাকানুন অবিলম্বে বাতিলের ব্যবস্থা করিতে হইবে। (জ) সাম্প্রতিক আন্দোলন নিহত শহীদ ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে এবং গুলিবর্ষণের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ঘোষণা করিতে হইবে। (ঝ) ছাত্রসমাজের শিক্ষা দাবী তথা ১১-দফার ১নং দাবী অবিলম্বে পূরণের ব্যবস্থা করিতে হইবে। (ঞ) শ্রমিক-কৃষক-চাকুরিজীবিদের বেতন বৃদ্ধিসহ সকল জরুরী দাবীসমূহ পূরণ করিতে হইবে। এই সমাবেশ এই সকল আশু পূরণের জন্য নিরবিছিন্ন সংগ্রাম চালাইয়া যাইবার ঘোষণা করিতেছে।