পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

452 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটির | কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা এপ্রিল, ১৯৬৯ স্বাধীন পূর্ব বাংলার কর্মসূচী সমন্বয় কমিটির প্রচারপত্র পূর্ব বাংলার জনতার নিকট কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি কর্তৃকস্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার কর্মসূচী পেশ বিপ্লবী জনতা! পূর্ব বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, এক কথায় সমগ্র জনগণের জীবন এক সর্বগ্রাসী সংকটের আগুনে জুলিতেছে। পূর্ব বাংলার জনগনের উপর এক নিষ্ঠুর জাতিগত নিপীড়ন চলিতেছে। সংকটের এই আগুন পূর্ব বাংলার জনতার ধমনীতে ধমনীতে বিদ্রোহের বহ্নিশিখা জুলাইয়া দিয়াছে। পূর্ব বাংলার জনগণ আজ মুক্তি চায়। মুক্তি চায় অনাহার, বুভূক্ষা, দুঃখ-দারিদ্র্য, বন্যা, বেকারত্ব ও জাতিগত নিপীড়নের অভিশাপ হইতে। কিন্তু কোন পথে আসিবে তাহাদের মুক্তি? সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও বৃহৎ পুঁজির প্রতিভূ এককেন্দ্রক স্বৈরাচারী সমরবাদী শাসক গোষ্ঠীকে পূর্ব বাংলার বুক হইতে উচ্ছেদ করিয়া একমাত্র স্বাধীন, সার্বভৌম জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েমের মাধ্যমেই পূর্ব বাংলার শোষিত, বঞ্চিত জনতার মুক্তি সম্ভব। “স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা” কায়েম করিতে হইলে গ্রাম বাংলায় জোতদার, মহাজন ও শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কৃষকের গেরিলা যুদ্ধ শুরু করিয়া, সামন্তশ্রেণীকে উৎখাতের মাধ্যমে গ্রামঞ্চলে মুক্ত এলাকা গঠনের মাধ্যমে। গ্রামে এইভাবে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে জনতার সশস্ত্র বাহিনী গড়িয়া তুলিতে হইবে, গ্রাম দিয়া শহর ঘেরাও করিতে হইবে এবং শাসক গোষ্ঠীকে চূড়ান্তভাবে উৎখাত করিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করিতে হইবে। শহরের শ্রমিক, মুটে-মজুর, রিকসাওয়ালা, স্কুটারওয়ালা, বাস্তুহারা, বস্তিবাসী, অফিসের কেরানী, পিয়ন, আদালী, দোকানদার, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী ও শহরের মধ্যে ব্যতিব্যস্ত করিয়া রাখা, যাহাতে গ্রাম বাংলার কৃষকের গেরিলা যুদ্ধ প্রচন্ড গতিতে অগ্রসর হইয়া যাইতে পারে। বিপ্লবী সাথীরা! পূর্ব বাংলার জনতা সেই পথেই আগাইয়া চলিতেছে। ১৯৬৮-৬৯ সালের বিপ্লবী গণঅভু্যুত্থান, গ্রাম বাংলার সিলেটের হাওর করাইয়া, খুলনার বাহিরদিয়ার কৃষি বিপ্লবের অগ্নিস্ফুলিঙ্গগুলি তাহারই নির্ভুল প্রমাণ। শ্যামপুর-পোস্তগোলা, খুলনা, সিদ্ধিরগঞ্জ, টঙ্গি, চট্টগ্রাম ও আদমজীতে শ্রমিক শ্রেণী নিজের ও শাসকগোষ্ঠীর রক্তে স্নান করিয়া তাহারই জুলন্ত স্বাক্ষর রাখিয়াছে। আজ তাই “কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটির” পক্ষ হইতে আমরা জনতার বিপ্লবী চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা রাখিয়া “স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা” কর্মসূচী আপনাদের নিকট পেশ করিতেছি। আসুন, মহান চীন, ভিয়েতনাম, পশ্চিম বাংলার নকশাবাড়ী, প্যালেষ্টাইনের আরবদের মুক্তি সংগ্রাম হইতে শিক্ষা গ্রহণ করিয়া আমরা সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে উক্ত কর্মসূচীকে বাস্তবায়িত করি। আসুন মহান মাও সেতুঙের শিক্ষাকে আমরা মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করি ও গ্রহণ করি “বন্ধুকের নলই সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস”। জয় আমাদের অনিবার্য। স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েম হইবেই। * সূত্রই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী জাফর আহমদ, হায়দার আকবর খান রনো এবং রাশেদ খান মেনন