পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

454 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড (২) জনগণের বাক-স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও প্রকাশনার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, ট্রেড ইউনিয়ন স্বাধীনতা, প্রদান করা হইবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-মুৎসুদি বৃহৎ পুজির পক্ষেও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোন প্রকার বক্তব্য প্রকাশ ও সংগঠিত করিবার অধিকার দেওয়া হইবে না। (৩) যে সকল ব্যক্তি বিপ্লবের বিরোধিতা করিয়াছিল অথবা বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছিল অথবা কোন সময়ে জনগণের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাইয়াছিল, সেই সকল ব্যক্তিদের সারা জীবনের জন্য অথবা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার কাড়িয়া লওয়া হইবে। অপরাধের তারতম্য বিবেচনা করিয়া তাহাদের সম্পত্তি সম্পূর্ন অথবা আংশিক বাজেয়াপ্ত, মৃত্যুদন্ড, কারাদন্ড কঠোর পরিশ্রমমূলক কাজ করিতে বাধ্য করা প্রভৃতি শাস্তি প্রদান করা হইবে। যাহাঁদের অপরাধ অপেক্ষাকৃত লঘু তাহদের কম শাস্তি প্ৰদান করা হইবে এবং মার্কসবাদী পদ্ধতিতে তাহদের চরিত্র সংশোধনের ( যেমন জনগণের সাথে মিশিয়া উৎপাদনমূলক শারীরিক পরিশ্রমে বাধ্য করা ) প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হইবে। এই সব কিছুই নির্ধারিত হইবে স্থানীয়ভাবে জনগণের নির্ধারিত প্রকাশ্য গণ-আদালত দ্বারা। ধর্মীয় স্বাধীনতাঃ (১) রাষ্ট্র মানুষের নিজ নিজ ধর্ম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করিবে। (২) বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, কিয়াং, ইত্যাদি এবং ধর্মীয় গবেষণাগারগুলি যাহাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হইতে পারে সেইজন্যে রাষ্ট্র ইহা তত্ত্বাবধানে পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করিবে এবং তাহা স্থানীয় ভিত্তিতে স্ব স্ব ধর্মের আগ্রহী জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হইবে। প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থাঃ (১) প্রশাসন ও বিচার বিভাগ হইতে আমলাতন্ত্রের সম্পূর্ন উচ্ছেদ সাধন করা হবে। (২) সরকার বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ ঐ পর্যায়ের গণপরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হইবে। (৩) বর্তমান সকল প্রকারের আইন বাতিল ঘোষণা করিয়া জনগণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সহিত সামঞ্জ্যপূর্ণ আইন প্রণয়ন করা হইবে। (৪) বিচার পদ্ধতি হইবে সহজ, সরল ও জনগণের আয়ত্তধীন। বিচারসমূহ অনুষ্ঠিত হইবে প্রকাশ্যভাবে ও স্থানীয় জনগণের মতামত সাপেক্ষে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাঃ (১) জাতীয় সরকারের অধীন সশস্ত্র গণফৌজ থাকিবে-ইহা দেশের ভিতরের ও বাহিরের প্রতিবিপ্লবী আক্রমণকে প্রতিহত করিবে এবং জনগণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের কাজে অংশ গ্রহণ করিবে। (২) বিপ্লবের মধ্য দিয়া যে গণফৌজ গড়িয়া উঠিবে, বিপ্লবোত্তর যুগে তাহাই রাষ্ট্রীয় গণফৌজ হিসাবে পরিগণিত হইবে। এই গণফৌজ মূলতঃ ভূমিহীন ও গরীব কৃষক ও শ্রমিক যুবকদের লইয়া গড়িয়া উঠিবে। (৩) জাতীয় গণপরিষদের এই গণফৌজ পরিচালনার ব্যাপারে পূর্ণ অধিকার থাকিবে। (৪) এই সশস্ত্র গণফৌজ ছাড়াও সমগ্র জনগণকে অস্ত্রের শিক্ষা প্রদান করা হইবে এবং গণমিলিশিয়া গঠণ করা হইবে।