পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

467 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান করিয়া প্রথমবারের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র সংশোধনের বিষয় যাহারা সুপারিশ করিতেছেন, আমরা তাঁহাদের সংগেও একমত হইতে পারিতেছি না। কারণ, এইরুপ অধিকার কে কাহাকে দিবে এবং এইরুপ অঙ্গীকার যে রক্ষিত হইবে উহার গ্যারান্টি কোথায়? উপরন্তু ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র সম্পর্কে নমনীয় নীতি গ্রহণের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ন আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, এক ইউনিট বাতিল ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে দেশবাসীকে যে পুনরায় ধোঁকাবাজি দেওয়ার কারসাজি থাকিতে পারে, উহা অতীতের রাজনৈতিক ঘটনাবলী সাক্ষ্য দিবে। জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্রের মূলনীতি স্থির করিয়া গণভোটের দ্বারা উহা গ্রহণের যে প্রস্তাব করা হইয়াছে সে বিষয়েও আমরা একমত হইতে পারিতেছি না। কারণ, প্রথমতঃ কণভেনশনে সকলের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা নাই। অতীতের ঘটনাই ইহার প্রমাণ। তৃতীয়তঃ কনভেনশনে অংশগ্রহণকারীগণ সকল বিষয়ে ঐক্যমত হইবেন, তাহা আশা না করাই বাঞ্ছনীয়। ঐকমত্য না হইলে নূতন সংকট দেখা দিবে। চতুর্থতঃ গণভোটে বিকল্প থাকিবে কি না এবং থাকিলে কতগুলি বিকল্প থাকিবে উহা স্থির করা দুরুহ ব্যাপার। বিকল্পহীন গণভোট যেরূপ অর্থহীন হইবে, অনুরুপভাবে বহুসংখ্যক বিকল্প থাকিলে এমন জটিলতা দেখা দিবে, যাহা পুনরায় সংকট ডাকিয়া আনিবে। বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন প্রস্তাব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিয়া আমরা মনে করি, অবিলম্বে সার্বজনীন প্রত্যক্ষ ভোটে জনসংখ্যার ভিত্তিতে এইরুপ পরিষদ নির্বাচন করা দরকার, যাহা একই সংগে সার্বভৌম পার্লামেন্ট ও গণপরিষদের যৌথ দায়িত্ব পালন করিতে পারিবে। অর্থাৎ দেশ শাসন এবং সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শাসনতন্ত্র রচনা-এই উভয় দায়তুই এই পরিষদ পালন করিবেন। অতীতের তিক্ত ও বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা স্মরণে রাখিয়া সকলেরই আজ দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে দ্রুত রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরাইয়া আনা এবং রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষার কাজে ঐক্যবদ্ধভাবে অগ্রসর হইয়া আসা প্রয়োজন এবং গণপ্রতিনিধিদের হাতেই আস্থার সহিত শাসনতন্ত্র প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করা উচিত। এই প্রসঙ্গে এ কথা আমরা সুস্পষ্টভাবে বলিয়া রাখা প্রয়োজন মনে করিতেছি যে, পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট বাতিল ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের দাবী অস্বীকার করিয়া দেশের শাসনতন্ত্র সমস্যার সমাধান কিছুতেই সম্ভব নয়। এই তিনটি দাবীকে ধামাচাপা দিয়া প্রকৃত সমস্যার সমাধান হইবে না। ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচীতে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবী, পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট বাতিলের দাবী উন্থাপিত হইয়াছে এবং জনগন ১১ দফা প্রতিষ্ঠার জন্য অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়া ইতিহাসে সৃষ্টিকারী গণঅভু্যত্থান দেশে ঘটাইয়াছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ১১ দফার শাসনতান্ত্রিক দাবীসমূহ (১১ দফার ২, ৩ ও ৪ নং দাবী) সহ মোট পাঁচটি দাবী গোলটেবিল বৈঠকে উত্থাপন করিয়াছিলাম। আমি ও আমার সহকর্মীগণ মনে করি, ন্যাপ এই সকল দাবী হইতে বিচ্যুত হইবে না এবং এই দাবীগুলি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নিরলস প্রচেষ্টা চালাইয়া যাইবে। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সহিত লক্ষ্য করিতেছে, কোন কোন রাজনৈতিক মহল বর্তমান অবস্থার সুযোগ পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, এক ইউনিট বাতিল ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের দাবী ধামাচাপা দিয়া সমস্যার দ্রুত সমাধানের নামে কৌশলে ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র স্বীকার করিয়া লইবার জন্য ব্যস্ত হইয়া!