পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

469 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড ইয়াহিয়া সরকারের শিক্ষানীতি এবং বিরোধী ছাত্রসমাজ (তিনটি বৃহৎ আগষ্ট, ১৯৬৯ রাজনৈতিক সংগঠনের সমালোচনা করে । সংগঠন) শিক্ষানীতির নামে প্রতিক্রিয়াশীলদের মিথ্যা অপপ্রচার সম্পর্কে ছাত্রসমাজের আবেদন সমর্থন করিতে পারে নাই। সামরিক সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির সমর্থক ইসলামী ছাত্রসংঘ নামক একটি তথাকথিত ছাত্র প্রতিষ্ঠান ও তাহদের মুরববী জামাতে ইসলাম নামক একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এই কারণে ক্ষিপ্ত হইয়া উঠিয়াছে এবং অযথা “ইসলাম বিপন্ন” প্রভৃতি শ্লোগান তুলিয়া আইয়ুব-মোনায়েম আমলের মতই পুরাতন কায়দায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং ছাত্রসমাজের বিরুদ্ধে বলগাহীন অপপ্রচার চালাইতে শুরু করিয়াছেন। এই সকল গোষ্ঠী প্রকাশ্যভাবে উস্কানিমূলক নগ্ন প্রচারণাও চালাইতেছেন এবং জনগণের মধ্যে ধর্মভিত্তিক বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টাও করিতেছেন শিক্ষানীতিকে কেন্দ্র করিয়া ইহাদের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ দেশে বর্তমানে বিরাজমান শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে নস্যাৎ করিবার অপচেষ্টা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এবং ইহার অর্থ হইতেছে নির্বাচন এবং ১১দফা ভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রভৃতি সম্পর্কে গণতান্ত্রিক মহল ও দেশবাসীর দাবীসমূহ নস্যাৎ করিবার সুযোগ আরও সম্প্রসারণ করা। প্রকৃতপক্ষ বিগত গণঅভু্যস্থানের সময় হইতেই জামাতে ইসলাম, ইসলামী ছাত্রসংঘ প্রভৃতি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীগুলি পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, এক ইউনিট বাতিল, পূর্ণ গনতন্ত্র কায়েম ও ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক মধ্যবৃত্তদের ন্যায্য দাবীসমূহ তথা ১১ দফার বিরোধীতা করিয়াছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতেই এই সকল গোষ্ঠী বর্তমানে সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করিয়া শিক্ষানীতি মতামত প্রদানকারী তথা গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল মহলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চাইতেছে। তাহদের এই সকল প্রচারণার জন্য দেশের মসজিদসমূহকে তাহারা ব্যবহার করিতেছে। পবিত্র মসজিদকে ইহারা নিজেদের গণবিরোধী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সকলেই এ কথা জানেন যে, সরকার প্রস্তাবিত খসড়া শিক্ষানীতি সম্পর্কে খোলাখুলি মতামত প্রদানের আহবান জানান। এই অভিমত লিখিতভাবে সরকারের নিকট পেশ করা হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (------------- ) উদ্যোগে বিগত ১২ আগষ্ট শিক্ষানীতির উপর একটি আলোচনা সভা সেমিনার) আহবান করা হয়। এই আলোচনা সভায় যখন ‘ভাষা বিষয়ে আলোচনা হইতেছিল, সে সময় ইসলামী ছাত্রসংঘের কতিপয় সদস্য আকস্মিকভাবে গোলযোগ শুরু করে এবং বক্তা ও শ্রোতাদের আক্রমণ করে। ফলে সাধারণ ছাত্রসহ উদ্যোক্তদের কেহ আহত হয়। সকলে আলোচনা গৃহ হইতে বাহির হইয়া আসিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ইহাতেও ইসলামী ছাত্রসংঘের আক্রমণ বন্ধ হয় না। ফলে অনিবাৰ্যভাবে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এই সংঘর্ষের দুখঃজনক পরিণতি হিসাবে আবদুল মালেকের জীবনাবসান ঘটে। আমরা মালেকের অকালমৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করিয়াছি এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনা সভায় গুন্ডাবাজির পশ্চাতে যে একটি সুপরিকল্পিত উদ্দেশ্য রহিয়াছে ইহাও উন্মোচন করা প্রয়োজন মনে করি। ইসলাম ছাত্রসংঘ প্রচার করিয়াছে যে, সেমিনারে ইসলাম বিরোধী ভাষণ দেওয়া হইতেছিল এবং তাহাদের বক্তৃতাদানের অধিকার দেওয়া হয় নাই। তাহদের এই প্রচারণা সর্বৈব মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।