পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

472 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড এই অশুভ চক্রের তৎপরতার ও প্রাধান্যের ফলেই ন্যায়-নীতি ও ইনসাফ বিসর্জন দিয়া এবং পাকিস্তানের ঐক্যের মূলে কুঠারাঘাত করিয়া পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের এক বিরাট পাহাড় সৃষ্টি করা হইয়াছে, যাহার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো আজ প্রায় ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে। এই দুর্বিষহ অবস্থা হইতে দেশকে রক্ষা করিবার দায়িত্ব আমাদের,-আমাদিগকে এই দায়িত্ব পালন করিতে হইবে। মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী সাহেব দেশকে এই দুঃসহ অবস্থা হইতে মুক্ত করিবার জন্য অর্থাৎ এ দেশে সত্যিকার গণতন্ত্র কায়েম করিবার জন্য এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করিয়া গিয়াছেন। জেল-জুলুম ও অন্য সকল প্রকার প্রতিবন্ধককে সহ্য ও অগ্রাহ্য করিয়া জন্মাবধি আওয়ামী লীগ এই মহান উদ্দেশ্য হাসিল ও বাস্তবায়নের পথ দৃঢ় ও নিরলস সংগ্রাম করিয়া চলিয়াছে। এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন সংগ্রামের ফলেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক অবিচারের অন্ততঃ কিছুটা মৌখিক স্বীকৃতি সকল মহলই প্রদান করিতে বাধ্য হইয়াছে। কিন্তু ইহা মৌলিক স্বীকৃতি মাত্র, কার্যতঃ সর্বক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাইয়া চলিয়াছে। ভৌগোলিক ও অন্যান্য কারণে পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বাত্তশাসনের দাবী অবশ্যই যুক্তিপূর্ন ও গ্রহণযেগ্য। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধকালে এই অঞ্চলের শাসনকাৰ্য্য পরিচালনায় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত এই অঞ্চলের স্বাভাবিক যোগযোগ ব্যাপারে যে অসুবিধার সৃষ্টি হইয়াছিল তাহতে এই অঞ্চলের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের যৌক্তিকতা ও অপরিহার্য্যতা বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে অকাট্যরূপে প্রমাণিত হইয়াছে। আমাদের প্রিয় নেতা মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী সাহেবের প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক গণতন্ত্র এবং আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক স্বায়ত্তশসন প্রতিষ্ঠার জন্য অবিরাম সংগ্রাম চালাইয়া যাইবে, কারণ, ইহাই পাকিস্তানের সকল জনগণের দাবী এবং ‘জনগণের নির্দেশই সকল ব্যবস্থার উৎস’। শাসনতান্ত্রিক আদর্শ আওয়ামী লীগ জাতীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। ইহা অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত বিশ্বাস করে যে, জনগণই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অধিকারী এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি কর্তৃক রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পরিচালিত নিকট সর্বতোভাবে দায়ী হইবে। উল্লিখিত মূল নীতিসমূহের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্রে আইন প্রণয়নশাসনকার্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও দেশরক্ষা কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ বর্তমানে সর্বাধিক প্রয়োজন। শুধু এই যুক্তিযুক্ত ও বাস্তব ব্যবস্থার মাধ্যমেই পাকিস্তানের সংহতি, স্থায়িত্ব, নিরাপত্তাও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা বিধান সম্ভব বলিয়া আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে। রাষ্ট্রে সকল প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের সার্বজনীন ও প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবে। ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী ও মতনির্বিশেষে নারী-পুরুষ প্রত্যেক নাগরিক ১৮ বৎসর বয়সে ভোটাধিকার লাভ করিবে এবং ২১ বৎসর বয়স পূর্ণ হইলে যে কোন ভোটার নির্বাচনপ্রার্থী হইবার অধিকারী হইবে। নির্বাচন স্বাধীনভাবে এবং গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হইবে।