পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

473 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড মৌলিক অধিকার ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী, মত ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ও জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে স্বীকৃত প্রতিটি অধিকার ভোগের অধিকারী হইবে। নাগরিকদের ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু জীবনযাপনের অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। সকল নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং ন্যায়সঙ্গত ও সহজ উপায়ে জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা থাকিতে হইবে। আইনের চক্ষে সকল নাগরিক সমান বলিয়া বিবেচিত হইবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকই আইনসঙ্গত সকল অধিকার ও মর্যাদা সমানভাবে ভোগ করিবে। অল্প ব্যয়ে দ্রুত ও সহজ উপায়ে ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। ব্যক্তি-স্বাধীনতা পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিককে তাহার সর্বক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হইবে, যাহাতে সে স্বীয় প্রতিভা বিকাশের পূর্ণ সুযোগ লাভ করিতে পারে এবং জাতীয় জীবনের সকল পর্যায়ে স্বীয় সামর্থ্য অনুযায়ী অংশগ্রহণ করিতে পারে ও সমাজের বৃহত্তম কল্যাণ সাধন করিতে পারে। মতামত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, বই-পুস্তক, সংবাদপত্র ও প্রচারপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা, সমবেত হইবার ও সংগঠন করিবার পূর্ণ স্বাধীনতা এবং দেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা থাকিতে হইবে। উপযুক্ত ও আইনসঙ্গত কারণ ব্যতীত কাহাকেও গ্রেফতার করা ও বিনা বিচারে কাহাকেও আটক রাখা চলিবে না। একমাত্র যুদ্ধকালীন সময় ব্যতীত অন্য কোন সময়ে এই সকল জীধকার খর্ব করা হইবে না। জরুরী অবস্থার অজুহাতে অন্যায়ভাবে কোন নাগরিকের অধিকার খর্ব করা চলিবে না। সর্বোপরি আওয়ামী লীগ হিন্দু-মুসলিম, বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী প্রভৃতি সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িক ও আঞ্চলিক বিভেদ ও বিদ্বেষের সম্পূর্ণ বিরোধী। আওয়ামী লীগ ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী ও মত নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকারে বিশ্বাস, ইহা গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রাথমিক শর্ত। বিচার বিভাগ বিচার বিভাগ হইতে সম্পূর্ণরুপে পৃথক থাকিবে। শাসনতন্ত্রে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতার বিধান থাকিবে। বিচার বিভাগের যোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার উপযুক্ত ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। শাসনতান্ত্রিক প্রস্তাবঃ ইহা পুনরুল্লেখ নিম্প্রয়োজন যে, আওয়ামী লীগ নির্ভেজাল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ৰীয় ও সামাজিক বিধি-ব্যবস্থায় বিশ্বাসী এবং ইহা প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংগঠন সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা চালাইয়া যাইবে। এখানে বিশেষভাবে কতিপয় প্রস্তাবের উল্লেখ করা যাইতেছে-যেগুলিকে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে :

  • পাকিস্তান হইবে একটি “ফেডারেশন” বা যুক্তরাষ্ট্র। এই ব্যবস্থার যৌক্তিকতা বা অপরিহার্যতা সম্বন্ধে আলোচনা অবকাশ নাই, ইহা সর্বজনস্বীকৃত সত্য। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান এই উভয় অঞ্চকে পূর্ন আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশসমূহকে পূর্ব প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হইবে। সরাকর হইবে ‘পার্লামেন্টারী’ ধরনের, যাহাতে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আইন সভা সার্বভৌম। যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনসভার আসন সংখ্যা জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হইবে।