পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

475 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড লীগের আশু লক্ষ্য। শিল্প ও ব্যবসা ক্ষেত্রে কোন প্রকারের একচেটিয়া অধিকার স্বীকার করা হইবে না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের মূলধন সরবরাহ ও অন্য সকল ব্যাপারে উৎসাহ প্ৰদান করা হইবে। ভৌগোলিক অবস্থা, ভূমির পরিমাণ ও জনসংখ্যা এবং প্রাকৃতিক অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানকে অধিকতর শিল্পায়িত করা ব্যাপক পরিকল্পনা অবশ্যই গ্রহণ করিতে হইবে। মূল, ভারী ও বৃহৎ শিল্প, যথা, খনিজ শিল্প, ইস্পাত শিল্প, সমর শিল্প, বিদ্যুৎ ও রাসায়নিক শিল্প,জাতীয়করণ করিতে হইবে এবং ইহাদের পরিচালনার ভার রাষ্ট্ৰীয় তত্ত্বাবধানে গঠিত ও পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর ন্যস্ত করিতে হইবে। ব্যাঙ্ক, বীমা, গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন ও যোগযোগ প্রভৃতি প্রত্যক্ষ জনস্বার্থমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহও জাতীয়করণ করা হইবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্য রাষ্ট্ৰত্তাধীনে পরিচালিত হইবে। পাকিস্তান, বিশেষভাবে পূর্ব পাকিস্তানের মতজনবহুল কৃষিপ্রধান দেশে কুটির শিল্প প্রসারের প্রয়োজনীয়তা, উপযোগিতা ও সাফল্য অনস্বীকার্য্য। সহজ অর্থনীতির খাতিরে কুটির শিল্পকে সর্বপ্রকার সাহায্য ও উৎসাহ প্রদান করিতে হইবে। দেশের সকল অঞ্চলে উহার বহুল প্রসারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। বর্তমানে চলতি ও ক্ষীয়মান কুটির শিল্পকে টিকাইয়া রাখার জন্য সর্বপ্রকার সাহায্য প্রদান ও ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে এবং নূতন ও প্রয়োজনীয় কুটির শিল্পের প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। কৃষি : কৃষি উন্নয়নের জন্য যে সকল স্বভাবজাত উপাদানের প্রয়োজন পাকিস্তান, বিশেষভাবে পূর্ব পাকিস্তান সেই সকল উপাদানে সমৃদ্ধ। কিন্তু স্বভাবজাত প্রাচুর্যের মধ্যেও এই দেশের কৃষক সমাজ কঠিন দারিদ্রের নিষ্পেষণে জর্জরিত ও মুমূর্ষ। এই বেদনাদায়ক অবস্থার প্রতিকারের জন্য কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত ও সভ্য পর্যায়ে আনয়নের উদ্দেশ্যে এক ব্যাপক ও বহুমুখী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অগৌণ কার্যকরী করিতে হইবে। পূর্ব পাকিস্তানের ভূমি প্রাকৃতিক সম্পদে ঐশ্বৰ্য্যবান। এই ভূমি আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও ব্যবহারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। সমবায় পদ্ধতিতে দেশে যৌথ চাষাবাদের প্রচলন করিতে হইবে। পূর্ব পাকিস্তানে প্রতি কৃষকের জমির পরিমাণ এত অল্প এবং তাহাও এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে বিক্ষিপ্ত যে সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদ ব্যতীত এখানে কৃষির উন্নয়নের কোন উপায় নাই। অতিসত্বর দেশের সর্বত্র যৌথ খামার সৃষ্টি করিতে হইবে। কৃষি ব্যাঙ্কের, সমবায় ব্যাঙ্কের এবং অন্যান্য কৃষি ঋণের টাকা কৃষকদের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে বিতরণ না করিয়া সমবায় পদ্ধতিতে পরিচালিত কৃষির জন্য উহা ব্যয় করা উচিত। ইহার ফলে কৃষকদের প্রধান সমস্যা মূলধন সমস্যার সমাধান অনেকাংশে সম্ভব হইবে। সমবায় পদ্ধতিতে কৃষি ব্যবস্থার ফলে আধুনিক চাষ ও জলসেচের যন্ত্রপাতি ক্রয়, উন্নত বীজ সংগ্রহ এবং উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা সহজ হইবে। স্থাপন করিতে হইবে। উন্নত ধরনের বীজ সরবরাহের, জমিতে সার প্রদানের ও সেচ ব্যবস্থার এবং গবাদি পশুর উন্নতির সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। বিভিন্ন প্রকারের পোকা-মাকড় ও রোগের ফলে শস্যাদির ব্যাপক ক্ষতির উপযুক্ত প্রতিরোধক ব্যবস্থা কার্যকরী করিয়া তুলিতে হইবে। সরকার কর্তৃক পৰ্যাপ্ত সংখ্যক আদর্শ খামার প্রচলিত করিয়া কৃষকদিগকে কৃষি ব্যবস্থা ও কৃষি উন্নয়নের আধুনিক পস্থা প্রদর্শন করিতে হইবে।