পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

476 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড পাটঃ পাট ব্যবসা জাতীয়করণ করিতে হইবে। সরকারী তত্ত্বাবধানে গঠিত ও পরিচালিত একটি পাট-ক্রয় ও রফতানীকার প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্তসংখ্যক শাখার মাধ্যমে কৃষকদের পাট সরাসরিভাবে ক্রয়ের ব্যবস্থা করিতে হইবে। এই প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকিবে না। তবে পাট বিক্রয় ও রফতানীর মাধ্যমে যে মুনাফা অর্জিত হইবে উহা পাট-চাষীদের কল্যাণে এবং পাটজাত দ্রব্য উৎপাদনের গবেষণায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করিতে হইবে। পাট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের যে ব্যবস্থা এত দিন আংশিকভাবে করা হইয়াছিল তাহা ব্যর্থ হইয়াছে। পাট ব্যবসা জাতীয়করণের জন্য একটি সুষ্ঠু ও সামগ্রিক আবশ্যক। উপরিউক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় মূলধন থাকিতে হইবে যাহাতে উহা দেশের সমস্ত পাট ক্রয় করিতে সক্ষম হয়। বন্যাঃ সাম্প্রতিককালে পূর্ব পাকিস্তানে বন্যা একটি জাতীয় বিপৰ্য্যায় ও সঙ্কটরুপে দেখা গিয়াছে। পূর্ব পাকিস্তানে বর্ষার শুরুতে উত্তরের নদীপথে বন্যা আসিয়া এক ধ্বংস-যজ্ঞের সৃষ্টি করে। অপর দিকে দক্ষিণের সমুদ্র হইতে সামুদ্রিক জলোচ্ছস ও লবণাক্ত পানি সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাসমূহের ধন-প্রাণ ও শস্যের বিপুল ক্ষতিসাধন করিয়া থাকে। বন্যা নিয়ন্ত্ৰণ করিবার জন্য ক্রগ মিশনের রিপোর্ট ও পরবর্তীকালীন উপদেষ্টাদের মতামতের আলোকে একটি সুষ্ঠু ও কার্যকরী পরিকল্পনা রচনায় সত্বর হাত দিতে হইবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা সমস্যাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যারুপে গ্রহণ করিয়া জাতীয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইহার সমাধান করিতে হইবে। খাজনা ও ভূমি ব্যবস্থাঃ কৃষি ও কৃষকের মানোন্নয়নের জন্য ভূমি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ও সংস্কার আশু প্রয়োজন। পূর্ব পাকিস্তানে সামন্ত ভূ-স্বামীদের উচ্ছেদ সাধন করা হইলেও সামন্তবাদী অবস্থা এখনও বর্তমান রহিয়াছে। সদা বর্ধিষ্ণু উচ্চহারের খাজনা, গুরুভার বিবিধ কর ও আদায়কারী আমলাদের হৃদয়হীন জুলুমবাজী ও অবৈধ উশল কৃষককুলকে ম্ৰিয়মাণ করিয়া রাখিয়াছে। এই অভিশাপের নাগপাশ হইতে ক্লেশ জর্জরিত কৃষককুলকে মুক্ত করিবার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে (পচিশ) বিঘা জমির মালিক প্রত্যেক কৃষকের জমির খাজনা মওকুফ করিয়া মওকুফ করিয়া দিতে হইবে। শ্রমিকদের অধিকারঃ আন্তজাতিক শ্রমিক সংস্থার গৃহীত সুপারিশ ও কনভেনশনের ভিত্তিতে শ্রমিকদের সকল প্রকার অধিকার ও সুযোগ-সুবিধামূলক আইন প্রণয়ন করিয়া প্রত্যেক শ্রমিকের, সুষ্ঠু, উন্নত ও সুন্দর জীবনযাপনের ব্যবস্থা করিতে হইবে। জীবনযাত্রার মান ও ব্যয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া প্রত্যেক শ্রমিকদের উপযুক্ত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করিতে হইবে। তাহদের চাকুরীর নিরাপত্তা প্রদান করিতে হইবে। শ্রমিকদের ও শ্রমিক পরিবারের জন্য বিনা ভাড়ায় বাসযোগ্য গৃহের বন্দোবস্ত করিতে হইবে। বিনা ব্যয়ে তাহদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করিতে হইবে। পীড়িত থাকাকালীন শ্রমিকদের পূর্ণ বেতনে ছুটির ব্যবস্থা থাকিবে। পূর্ণ বেতনে বৎসরে অন্ততঃ একমাস হইবে। তাহদের ছেলেমেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা-অন্ততঃ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত-করিতে হইবে। শিল্পের মুনাফার একটি নির্দিষ্ট অংশ শ্রমিকদের শেয়ার হিসাবে সংরক্ষিত রাখিয়া শ্রমিকদিগকে শিল্পের অংশীদার হওয়ার সুযোগ প্রদান করিতে হইবে।