পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

477 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শ্রমিক সংঘ গঠন ও ধর্মঘট করিবার অধিকার স্বীকার করিতে হইবে। কলকারখানা পরিচালনার ব্যাপারে শ্রমিকদের মতামত গ্রহণ করার ব্যবস্থা থাকিতে হইবে। বেকার শ্রমিকদের ভাতা দিতে হইবে এবং সকল শ্রমিকদের বার্ধক্যের জন্য উপযুক্ত ভাতার ব্যবস্থা থাকিতে হইবে। বেসরকারী ও আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীদিগকে উপযুক্ত বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করিতে হইবে। বেকার সমস্যাঃ ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য একটি সুষ্ঠু ও ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করিতে হইবে। সাকুল্য জনশক্তিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের সার্বিক উন্নয়নে নিয়োগ করতঃ জনশক্তির অপচয় রোধ করিতে হইবে এবং জাতীয় অর্থনীতির উপর হইতে বেকারত্বের অবাঞ্ছিত চাপ অপসারণ করিয়া উহাকে স্বাভাবিক ও গতিশীল রাখিবার ব্যবস্থা করিতে হইবে। শিক্ষাঃ পাকিস্তানের প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষার অধিকারকে বাস্তব রুপদানের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করিতে হইবে; মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এরুপ ব্যাপকভাবে প্রসারিত, সহজলভ্য ও সুলভ করিতে হইবে যাহাতে দরিদ্রতম নাগরিকের সম্মানও শিক্ষা লাভের সুযোগ গ্রহণ করিতে পারে। এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করিতে হইবে যাহাতে আর্থিক বিবেচনা কাহারও দেশের উচ্চতম শিক্ষা লাভের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করিতে না পারে। যুগের ও দেশের চাহিদা অনুসারে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রসার সাধন করিতে হইবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যাপ্তসংখ্যক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ব্যবস্থা করিতে হইবে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্টানরুপে বাস্তব স্বীকৃতি প্রদান করিতে হইবে। একজন সুপ্রতিষ্ঠিত ও সর্বজনসাম্য শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর থাকিবেন। সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসব দমনমূলক আইন প্রবর্তন করা হইয়াছে সেই সব আইন বাতিল করিতে হইবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা যথাসম্ভব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালনার ব্যবস্থা করিতে হইবে। বিভিন্ন স্তরে, যথা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষাদান কাৰ্য্যে ব্যাপৃত ব্যক্তিদের জন্য এমন পরিবেশ সৃষ্টি করিতে হইবে যাহাতে উচ্চ মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ শিক্ষাদান কার্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। ংলা ভাষা ও সাহিত্য পাকিস্তানের সর্ব অঞ্চলে মাতৃভাষাকে সর্বোচ্চ শিক্ষার মাধ্যমরুপে গ্রহণ করিতে হইবে। পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে যত শীঘ্ৰ সম্ভব শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে প্রচলন করিতে হইবে এবং পাকিস্তানের সরকারী ও বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যবহারিক জীবনে বাংলা ভাষার ব্যাপক প্রসারের চেষ্টা করিতে হইবে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকলার উন্নতি ও বিকাশের জন্য কার্যকরী উৎসাহ প্রদান করিতে হইবে এবং সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে।