পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

481 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড কৃষি, শিল্প ও বৈদেশিক মুদ্র বন্টনের ক্ষেত্রে পাকিস্তান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনায় কমিশন দেশের দু'অংশের বিপরীতমুখী কৃষিনীতি অনুসরণ, শিল্পোন্নয়ন পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীভূত করা এবং অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক সাহায্য বন্টনের ক্ষেত্রে অনুসৃত বৈষম্য নীতির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং এই প্রতিক্রিয়া থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। গত দশকে অধিক হারে বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণলাভ করা সত্ত্বেও পাকিস্তানের দু'অঞ্চলে সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থনৈতিক অবস্থা কেন সৃষ্টি হয়েছে কমিশনের রিপোর্ট থেকে তারও একটা আভাস পাওয়া যায়। ঢাকাঃ মঙ্গলবার, ২রা অগ্রাহায়ণ, ১৩৭৬ নভেম্বর ১৮, ১৯৬৯ অসম কৃষি-উন্নয়ন থেকে প্রকৃত বৈষম্যের শুরু (পূর্বদেশ রিপোর্ট) পিয়ার্সন কমিশন নামে পরিচিত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কমিশনের চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা লাভের একুশ বছরের মধ্যেও পূর্ব পাকিস্তানে কোন গ্ৰীণ রেভোলিউশন বা সবুজ বিপ্লব সংঘটিত হয়নি। সামগ্রিক কৃষি বিপ্লবকেই কমিশন সবুজ-বিপ্লব’ আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে আধুনিক সেচ পশ্চিম পাকিস্তানে কৃষি বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয় এবং মাত্র দু’বছরে শতকরা ৫০ ভাগ গম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে বৈষম্যমূলক কৃষি নীতি অনুসরণই দেশের দু'অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধির জন্য মূলতঃ দায়ী। কমিশনের রিপোর্টে আমদানী বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈদেশিক সাহায্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রদর্শন করা হয়েছে। গড়পড়তাভাবে উন্নয়নশীল দেশের আমদানী বাণিজ্যের শতকরা ২০ ভাগ বৈদেশিক সাহায্যের অর্থানুকূল্য লাভ করে থাকে। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানে আমদানী বাণিজ্যের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ এইডের অর্থানুকুল্য লাভ করে। এই আমদানী বাণিজ্যে পূর্ব পাকিস্তান কিভাবে গত দু'দশক যাবৎ বঞ্চিত হয়েছে তার হিসাব পাকিস্তানের সরকারী হিসাবপত্তরেও রয়েছে। পিয়ার্সন রিপোর্টে বলা হয়েছে, এইডের অর্থানুকূল্যে আমদানী ক্ষেত্রে নতুন যন্ত্রপাতি ও খুচরা অংশ, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামল, কৃষি উন্নয়নের জন্য কীটনাশক ঔষধ ও সার প্রভৃতিকেই বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়। এর পর আমদানী বাণিজ্যে উপেক্ষিত পূর্ব পাকিস্তানের কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার কারণ প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখ না করে কমিশন বলেছেন, “পাকিস্তানের শিল্পোন্নতি প্রধানতঃ পশ্চিম পাকিস্তানেই ঘটেছে।” কমিশনের রিপোর্টে পাকিস্তানের রফতানী বানিজ্যের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এবং কোরীয় যুদ্ধের আকস্মিক তেজীভাবের সুযোগ নিয়ে প্রধানতঃ কাঁচা পাট ও তুলা রফতানীর উপর নির্ভর করে পাকিস্তান তার বহির্বাণিজ্যে কিভাবে লাভবান হয়, তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। প্রধানতঃ পূর্ব পাকিস্তানের পাট ও অন্যান্য কাঁচামাল দ্বারাই বহির্বাণিজ্যে খাতে প্রায় দুদশক যাবৎ বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ অর্জিত হয়েছে। কিন্তু অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা এবং ঋণ ও সাহয্যের অর্থ বন্টনে পূর্ব পাকিস্তান যে তার ন্যায্য অংশ কখনো লাভ করেনি, তার হিসাব সরকারী পরিসংখ্যানেও গোপন করা সম্ভব হয়নি। কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই ক্রমাগত বৈষম্য পূর্ব পাকিস্তানে মূলধন সৃষ্টিতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং অন্যাদকে পূর্ব পাকস্তানের পুঁজি ও সম্পদ ক্রমাগত অন্যত্ৰ পাচার হতে থাকে। কমিশনের রিপোর্টে এই বেষম্যমূলক অবস্থার বিশদ বর্ণনা না দিয়ে সংক্ষেপে সন্তব্য করা হয়েছে “পূর্ব পাকিস্তানকে শিল্পোন্নয়নের জন্য ক্রমাগত সরকারী খাতের উপর নির্ভর করতে হয় এবং পুঁজি নিয়োগের সুযোগ গ্রহণে বেসরকারী খাত ব্যর্থ হয়।” (মুদ্রিত রিপোর্ট, পৃঃ ৩১০)।