পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

482 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড পিয়ার্সন কমিশন বা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কমিশনের মতে স্বাধীনতা লাভের পরে যেসব উন্নয়নশীল দেশে দ্রুত “সবুজ বিপ্লব” বা কৃষি সংঘটিত হয়েছে যেসব দেশেই দ্রুত শিল্পোন্নতি ঘটেছে। পাকিস্তানে কৃষি বিপ্লব শুধু দেশের এক অংশেই অনুষ্ঠিত হয় এবং অন্য অংশে তার বেশী সুযোগ থাকা সত্ত্বে ও তার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করা হয়েছে। কমিশনের মুদ্রিত রিপোর্টের ৩১৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ “দেশের দু'অংশে কৃষির অসম বিকাশ আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি করেছে। অথচ এই বৈষম্য দূরীকরণে কৃষিই সর্বাধিক সহায়তা যোগাতে সক্ষম। পূর্ব পাকিস্তান অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার ভূমি অত্যন্ত উর্বর এবং সেখানে অধিক উৎপাদন সক্ষম ধানের বীজ ছাড়াও উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব। সেচ কার্যের জন্য সেখানে পানি রয়েছে এবং জমির শতকরা ২০ ভাগে মাত্র বছরে দু’বার শস্য উৎপাদন করা হয়। বিভিন্ন নদী থেকে লো-লিফট পাম্পের সাহায্যে পানির ব্যবস্থা করে উৎপাদন বহু গুণ বৃদ্ধি সম্ভব। এ ব্যাপারে প্রাথমিক পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়নি, সুতরাং এই পরিকল্পনার দ্রুত সম্প্রসারণ অত্যাবশ্যক।” পূর্ব পাকিস্তানে যেখানে সকল সুযোগ ও জমির উৎপাদিকা শক্তির বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গত দশকে কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রাথমিক কর্মসূচী ছাড়া বলতে গেলে কিছুই করা হয়নি, সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানে স্বাধীনতা লাভের পরপরই অনুর্বর লবণাক্ত কৃষি ভূমিতে কৃষি বিপ্লব সম্পাদনের জন্য কি করা হয়েছে, কমিশন তার বিশদ বিবরণ প্রদান করেছেন। কমিশন বলেছেন, “উন্নত টেকনোলজির সাহায্যে পশ্চিম পাকিস্তানে কৃষি ক্ষেত্রে নাটকীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে। গম ও চাল উৎপাদনের ক্ষেত্রে আরো বেশী ফলন প্রত্যাশা করা যায়।” (পৃষ্ঠা ৩১৬) “১৯৫০সালের দিকে পশ্চিম পাকিস্তানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার অভাবে বহু চাষাবাদের জমিতে লবণাক্ততার দরুন উৎপাদন মোটেই সম্ভব ছিল না। কিন্তু জলাবদ্ধতা ও জমির লবণাক্ততার সেই অভিশাপকে এখন আশীর্বাদে রুপান্তরিত করা হয়েছে। (পৃষ্ঠা ৩৪)। বন্যা বিশেষজ্ঞরা বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের বন্যার অভিশাপকেও আশীর্বাদে রুপান্তর করা এবং কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপ্লব সৃষ্টি সম্ভব। এক্ষত্রে শুধু প্রয়োজন পশ্চিম পাকিস্তানের সিন্ধু অববাহিকা পরিকল্পনার মত সুষ্ঠু পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় অর্থ, বৈদেশিক সাহায্য ও বিশেষজ্ঞের কিন্তু গত একুশ বছরেও এই অভাবটি পূরণ করা সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার প্রক্কালে পশ্চিম পাকিস্তান কৃষিক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের চাইতে উন্নত ছিল না, বরং কোন কোন এলাকা পশ্চাৎপদ ছিল। এই অবস্থায় মাত্র দু'দশকে দু'অঞ্চলের মধ্যে মারাত্মক কৃষি বৈষম্য সৃষ্টি হল কি করে? একদিকে জমির লবনাক্ততা দূর করা এবং গভীর কূপ খনন ও নলকূপ বসিয়ে সেচ ব্যবস্থার প্রবর্তন কৃষির উন্নতিতে সহায়তা জুগিয়েছে, অন্যদিকে আধুনিক ও উন্নত কৃষি পদ্ধতি প্রবর্তন গোটা কৃষি ব্যবস্থার চেহারা পাল্টে দিয়েছে। কমিশন বলেছেন-“গম ও চালের নতুন ধরনের বীজ প্রবর্তন কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনয়ন করে। ১৯৬৬-৬৭ সালে যেখানে ২ লক্ষ একর জমিতে নতুন গমের বীজ রোপণ করা হয়েছিল, পরবর্তী বছরে তা ২৩ লক্ষ একর জমিতে গিয়ে দাঁড়ায়। নতুন বীজ থেকে চালের উৎপাদনও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণের টাকায় দ্রুত সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয় এবং দ্রুত সার উৎপাদনেরও ব্যবস্থা হয়। পশ্চিম পাকিস্তান বিশ্বের দীর্ঘতম একটানা সেচ ব্যবস্থার অধিকারী। সেচের অধীনে উন্নত চাষ, পানি ও সার