পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

489 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ইয়াহিয়া খানের ভাষণ সম্পর্কে ছাত্রসমাজ (তিনটি বৃহৎ ছাত্রদল) নভেম্বর,১৯৬৯ ১১-দফার সংগ্রাম চলবেই জনগণের সংগ্রাম, শহীদের রক্তস্রোত, মাতার অশ্রুধারা, ছাত্র-শ্রমিক-রাজনৈতিক কর্মীদের নির্যাতন ভোগ ও দেশপ্রেমিকের কঠোর সাধনা বৃথা যায় নাই। বৃথা যায় নাই বিগত গণঅভু্যত্থান ও এগারো দফার ঐতিহাসিক সংগ্রাম। গণ-অভু্যত্থানের পটভূমিকায় দ্বিতীয়বারের জন্য সামরিক শাসন বলবৎ করা হইলেও গণদাবীর নিকট পরাভূত হইতে হইতেছে। সাম্রাজ্যবাদ সামন্ত্রবাদ, একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থ রক্ষাকারী প্রতিক্রিয়াশীল কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীকে। দেশে পুনরায় পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রের শাসন প্রবর্তনের জন্য “এক ইয়াহিয়া খানকে। ইহাতে গণ-সংগ্রামের এক বিরাট বিজয় সূচিত হইয়াছে। “এক লোক এক ভোট” নীতির ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভিত্তি ঘোষিত হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক সংখ্যাসাম্য নীতিরও অবসান ঘটিল এবং জনসংখ্যার ভিত্তিই সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ভিত্তি হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করিল। পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়াশীল এক ইউনিট ভাঙ্গিয়া দেওয়ার ঘোষণাও সারা দেশর গণতন্ত্রকামী ও স্বায়ত্তশাসনকামী জনগণের আর একটি বিরাট বিজয়। প্রতিক্রিয়াশীল ও দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীগুলি ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র পুনরায় চালু করার যে আবদার করিতেছিল, জনমতের চাপে তাহাদের ঐ আবদারও ভাসিয়া গিয়াছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যে রাষ্ট্রনীয় নীতি প্রনয়নের ক্ষেত্রে বারবার বঞ্চিত হইয়াছে উহাও প্রসিডেন্ট ন্যায্যতার ভিত্তি স্বিকৃত হইলেও মূলতঃ যে স্বায়ত্তশাসনের জন্য ১৯৬৬ সালের ৭ই জুনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী করা হইয়াছিল এবং ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক ১১-দফার দাবীতে পৃথিবী বিখ্যাত যে গণ-অভু্যত্থান হইল সেই স্বায়ত্তশাসন পূর্ব বাংলার মানুষ এখনও পায় নাই। তথাপি ইহার দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের স্বায়ত্তশাসনের দাবীর ন্যায্যতার ভিত্তি স্বীকৃত হইয়াছে। দেশে রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা শুরু করিতে দেওয়ার জন্য যে দাবী উঠিয়াছিল উহার পরিপ্রেক্ষেতে ১লা জানুয়ারী হইতে জনসভা, মিছিল, ধর্মঘটের অধিকার ফিরাইয়া দেওয়ার কথাও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঘোষণা করিয়াছেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণের মাধ্যমে যে সকল ঘোষণা দেওয়া হইয়াছে উহাতে এই সকল প্রশ্নে গণসংগ্রাম ও গণতন্ত্রকামী স্বায়ত্তশাসনকামী জনগণের বিজয় সূচিত হইয়ছে, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই। অবিলম্বে মার্শার ল প্রত্যাহার কর কিন্তু জনগণের দাবী হইল এই যে, দেশ হইতে অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হউক এবং পূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার ফিরাইয়া দেওয়া হউক। একই সঙ্গে বিনাবিচারে আটক দেশপ্রেমিক বুদ্ধ জননেতা মনি সিংসহ সকল রাজবন্দী ও রাজনৈতিক কারণে সামরিক আইনে সাজাপ্রাপ্ত ও আটক সকল বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হউক এবং রাজনৈতিক কারণে জারীকত মামলা সামরিক আইনের মামলা, ঘোষিত সাজা, গ্রেফতার পরোয়ানা প্রভৃতি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হউক। এইভাবে পরিপূর্ণ মুক্তি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে অবাধ ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়া পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে-ইহাই জনগণ ও ছাত্রসমাজ আশা