পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

495 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড (ঘ) জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হইবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সহিত সরকারের সম্পর্ক হইবে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার ভিত্তিতে ধর্মের নাম ব্যবহার করিয়া সকল প্রকার শোষণ উচ্ছেদ করা হইবে। ৪। স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে একটি গণবাহিনী থাকিবে। শ্রমিক, কৃষক, মেহনতী জনতার সমবায়ে এই গণবাহিনী গঠিত হইবে। ইহা ছাড়াও সমগ্র জাতি বিশেষ করিয়া শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি জনতাকে সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তোলা হইবে এবং তাহদের লইয়া গণ-মিলিশিয়া গঠন করা হইবে। ৫। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিরঙ্কুশ করিবার জন্য আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ উচ্ছেদ সাধন করিয়া প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগকে আমল পরিবর্তন করা হইবে। জনগণের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় জড়িত ব্যক্তিদের নির্বাচিত করা হইবে। বিচার বিভাগের মূল ভিত্তি হইবে গণআদালত। ৬। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে পিন্ডি, ওয়াশিংটন, মস্কো, নয়াদিল্লীর সরকারের বিরোধীতা করা হইবে। যে কোন বন্ধুদেশের বশ্যতা স্বীকার করা হইবে না। সমাজতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে স্থাপিত হইবে। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালিত হইবে পারস্পরিক লাভ ও মুনাফার ভিত্তিতে। পৃথিবীর দেশে দেশে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতি সকল প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় সাহায্য ও সমর্থন প্রদান করা হইবে। ৭। (ক) জোতদারী, মহাজনী, ইজারাদারী, তথা সকল প্রকার সামন্তবাদী শোষণ ব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটানো হইবে। “কৃষকদের হাতে জমি” এই নীতির ভিত্তিতে ভূমিহীন ও গরীব কৃষকদের মধ্যে জোতদার, মহাজনদের উদৃত্ত বাজেয়াপ্ত জমি বন্টন করা হইবে। (খ) টাকা ও পণ্যে আদায়কৃত খাজনা প্রথার অবসান করা হইবে। (গ) কৃষকের অর্থকরী ফসল ধান, পাট, ইক্ষু ইত্যাদি ন্যায্যমূল্য প্রদান করা হইবে। এই সকল ফসলের মূল্য নির্ধারিত হইবে চাউলের সঙ্গে বিনিময়ের ভিত্তিতে। (ঘ) কৃষিজাত উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষককুলকে বিনাসুদে ঋণ দেওয়া হইবে। কৃষককে বকেয়া খাজনা ও ঋণের বোঝা হইতে মুক্তি করিয়া উন্নত চাষাবাদ করিবার সকল প্রকার উৎসাহ ও সুবিধাদি প্রদান করা হইবে। ৮। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থায়ী ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে এবং জল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য সেচ ব্যবস্থার প্রণয়ন করা হইবে। ৯। (ক) বিদেশী মালিকানায় পরিচালিত সমস্ত শিল্প ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ বাজেয়াপ্ত করিয়া জনগণের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হইবে। (খ) বৃহৎ পুঁজির শোষণ হইতে জনগণের মুক্ত করিবার জন্য বৃহৎ বাইশ পুঁজি বাজেয়াপ্ত করা হইবে। (গ) ব্যাঙ্ক, বীমা, পাটশিল্প, পাট ব্যবসা ও অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবসাসমূহ জাতীয়করণ করা হইবে। (ঘ) বৈদেশিক বাণিজ্য রাষ্ট্রায়ত্ত করা হইবে। (ঙ) সকল প্রকার পরোক্ষ কর প্রথা বাতিল করা হইবে। আয়ের হারের ভিত্তিতে কর ধার্য করা হইবে। (চ) জনগণ বিরোধী অসৎ ব্যক্তি ও আমলাদের অসদুপায়ে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হইবে।