পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

549 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ শিক্ষা দিবসে ছাত্রলীগের সভার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাকুলার ১৭ সেপ্টেম্ব, ১৯৭০ প্রস্তাবাবলী (কেন্দ্রীয় সংসদ) বিশেষ প্রস্তাব ঘুমের দেশের মানুষের ঘুম ভাংগাইতে যাইতে সোনার বাংলার যে সকল সোনার ছেলে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের লেলুয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে ১৯৬২ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর চিরকালের জন্য ঘুমাইয়া পরিয়াছেন, আজকের এই মহতী সভা মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউল্লাহসহ সেই সকল বীর শহীদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিতেছে। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ মনে করে যে, সেদিন জাতীয় শিক্ষা কমিশনের প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষানীতিকে প্রতিহত করিতে গিয়া যাহারা নিহত হইয়াছেন তাহারা দেশ ও জাতির কল্যান, গণমুখী, গণতান্ত্রিক, সহজলভ্য, বৈজ্ঞানিক, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি কায়েম এবং ভবিষ্যৎ বংশধরগণের মঙ্গল কামনায়ই আত্নাহুতি দিয়াছেন। এই মহতী সভা পুনরায় তাহদের মহান স্মৃতিকে স্মরন করিয়া শপথ গ্রহণ করিতেছে যে, যতদিন শহীদের আরব্ধ কার্য সম্পাদিত না হবে, ততদিন যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে ছাত্রলীগ সংগ্রাম চালাইয়া যাইবে। রাজনৈতিক প্রস্তাব এই মহতী সভা গভীর উদ্বেগের সহিত দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিতেছে। আগামী ৭ই ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হইলেও নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য চরম প্রতিক্রিয়াশীল ডানপন্থী গোষ্ঠী, অতিবিপ্লবী হটকারী বামপন্থী গোষ্ঠী, এক শ্রেণীর সরকারী আমলারা এবং গণবিরোধী অশুভ শক্তি যেমন পাঞ্জাবী পুজিপতি, সামন্তপ্রভু, জোতদার, জমিদার যুগপৎ প্রচেষ্টা চালাইয়া যাইতেছে। নির্বাচনে নিশ্চিত ভরাডুবি লক্ষ্য করিয়া উস্কানিমূলক আচরণ শুরু করিয়াছে, সামরিক আইনের ব্যাপক অপপ্রয়োগ ঘটাইয়া শত শত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও কর্মী, ছাত্রলীগ সদস্যসহ বিপুলসংখ্যক ছাত্রকর্মী, শ্রমিককে আজ গ্রেফতার করা হইতেছে, হুলিয়া জারি করিয়া হয়রানী করা হাইতেছে। বস্তুতঃপক্ষে আগামী নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিকেবশ আজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত। আমরা মনে করি আগামী নির্বাচন কোন ক্ষমতা দখলের নির্বাচন নয়, বরং ৬-দফা ভিত্তিক স্বায়ত্বশাসন, ১১-দফার সত্যিকারের সমর্থকদের পক্ষে রায় ঘোষণার জন্য এই সভী দেশবাসীর প্রতি আকুল আবেদন জানাইতেছে। সংগে সংগে নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাব দেশবাসী মৰ্মে মর্মে অনুভব করিতেছে। নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সফল করার জন্য এই মহতী সভা দেশবাসীর পক্ষ হইতে নিম্ন লিখিত (ক) অবিলম্বে পাইকারী হারে ছাত্র, শ্রমিক, রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদেরকে গ্রেফতার বন্ধ করা হউক, ছাত্রলীগ সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোসেন, তোহা গাজী, সরদার রশীদ, বিমল দাস, মন্টু, সেলিমসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দেওয়া হউক, দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করা হউক ও খসরুসহ দাজ্ঞা প্রাপ্তদের দন্ডাদেশ মওকুফ করা হউক এবং শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা হউক, লক আউট, লে-অফ প্রত্যাহার করা হউক, ধর্মঘট শ্রমিকদের দাবী-দাওয়া মানিয়া লওয়া হউক।