পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

554 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়ে পূর্ব | পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন | ২অক্টোবর, ১৯৭০ বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ।। মেহনতী জনতার সাথে একাত্ম হও । ২রা অক্টোবরের গণসমাবেশে উপস্থিত কৃষক-শ্রমিক মেহনতি জনতার প্রতি পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন সংগ্রামী বন্ধুগণ, কৃষক সমিতির সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ডাকে আপনারা গ্রাম-বাংলার অগণিত ভুখা-নাঙ্গা কৃষক, শহরের বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ ও সমাজের অন্যান্য নিপীড়িত নিগৃহীত জনতা আজ আজ রাজধানী ঢাকা শহরের এই সমাবেশে ও গণমিছিলে যোগ দিয়াছেন। আপনাদের জীবনে আজ যে সর্বগ্রাসী ংকট অনাহার, ক্ষুধা, মৃত্যু ও জুরার যে নির্মম অভিশাপ, ট্যাক্স, খাজনা, ঋণ ও সুদের যে দুৰ্বিসহ বোঝা, জোতদার, মহাজন-মালিক শ্রেণীর যে নিষ্ঠুর শোষণ, সাম্বাৎসরিক বন্যার যে ভয়াবহ তান্ডবলীলা, সর্বোপরি পূর্ব বাংলার মানুষের উপর যে নিষ্ঠুর জাতিগত নিপীড়ন, তাহা আজ আপনাদের করিয়া তুলিয়াছে বিদ্রোহী ও মুক্তিপাগল। আর তখন যখন যেখানেই কোন সংগ্রামের প্রতিশ্রুতি আপনারা শুনতে পান, সংগ্রামের বলিষ্ঠ প্রত্যয় ও মুক্তির দুর্বার আকাঙ্খা লইয়া সেখানেই আপনারা যোগদান করেন। আজও আপনারা ঢাকা মহানগরীর এই সমাবেশে হাজির হইয়াছেন আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ও শোষণ মুক্তির বুকভরা আশা লইয়া। আপনাদের সংগ্রামী চেতনার প্রতি পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ হইতে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। আপনারা আমাদের অভিনন্দন গ্রহণ করুন। আপনাদের জীবনে এই যে সংকট, ইহার মূল কারণ কি? সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করিয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদি বৃহৎ পুঁজির প্রতিভূ পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত এককেন্দ্রীক স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীই আজ সারা দেশের মানুষের দুঃখ, দুৰ্দ্দশা, অভাব-অনটন, বুভূক্ষা ও মৃত্যুর জন্য দায়ী। পাকিস্তানের জন্মের প্রথম দিনটি হইতে এই শাসকগোষ্ঠী দেশের মোট জনসমষ্টির শতকরা ৮০ জন কৃষকের উপর চালাইয়া যাইতেছে নির্মম শোষণ আর নির্যাতন। সামন্তবাদী ভূমি ব্যবস্থার দরুণ কৃষক তার সর্বস্ব খোয়াইয়া দিনের পর দিন পথের ভিখারীতে পরিণত হইতেছে। বৃহৎ পুঁজির স্বার্থে তার বহুকষ্টে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য হইতে সে বঞ্চিত। পানির দামে শ্রমিকের শ্রমশক্তি কিনিয়া লইয়া ইহার গড়িয়া তুলিয়াছে মুনাফার পাহাড়। অপরদিকে এই দুই দেশীয় শোষকের সহযোগিতায় সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করিয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ অসম বাণিজ্যিক চুক্তি ও কঠোর শর্তযুক্ত ঋণ ও বৈদেশিক সাহায্যের বেড়াজালে সারাদেশকে আবদ্ধ করিয়া সারাদেশের অর্থনৈতিক চাবিকাঠি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে লইয়া গিয়াছে। ইহাদেরই স্বার্থে আজ পূর্ব বাংলার কৃষকের জীবনের সবচাইতে বড় অভিশাপ বন্যা সমস্যার কোন সমাধান হইতেছে না। ফলে খাদ্য শস্য রপ্তানীর বাজারে। অন্যদিকে তাহদের বিশ্বব্যাপী আগ্রাসী যুদ্ধনীতিকে বাস্তবায়িত করার জন্য পূর্ব বাংলাকে কেন্দ্র করিয়া একটির পর একটি ষড়যন্ত্র করিয়া চলিতেছে। তাহাদের এই ষড়যন্ত্রের নতুন সহযোগী হইয়াছে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদের উপর নির্ভরশীল ও তাহার সহযোগী এদেশের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার বুকের উপর যে আধা-উপনিবেশিক, আধা- সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার জোয়াল চাপাইয়া রাখিয়াছে তাহাই জন্ম দিয়াছে আজকের দিনের এই মহাসংকট।