পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

599 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ জাতীয় মুজাহিদ সংঘ কর্তৃক প্রকাশিত “স্বাধীন জাতীয় মুজাহিদ সংঘ কর্তৃক ১ জানুয়ারা, ১৯৭১ পূর্ব পাকিস্তানের রূপরেখা” প্রকাশিত পুস্তিকা আমরা যা কিছু সপেছি তোমায়, স্বদেশ আমারঃ স্বদেশ আমার স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের রূপরেখা পশ্চিম পাকিস্তান এ পর্যন্ত বেশী নিয়েছে এগারো হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় চাকুরীতে বাংগালীর সংখ্যা শতকরা মাত্র দশজন সূচনা সুদীর্ঘ ২৩ (তেইশ) বৎসর ধরিয়া পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীগণ আমাদেরকে বঞ্চনা ও লাঞ্ছনার একশেষ করেছে। কিন্তু কেন এমন করছে? তাদের খপ্পর থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় এবং মুক্তির পরেই বা কি করতে হবে? তার জবাব পেতে হলে আমাদেরকে খুঁজে দেখতে হবে- কেন পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল? ইহার সৃষ্টির পরে কেন নানা জটিলতার পরিস্থিতির উদ্ভব হইল? পরিস্থিতিগুলি কি কি? ইহার মোকাবিলায় আমাদের রাজনীতিকরা কি কি করেছে এবং ইহারই প্রতিকার বা কি? আমরা একে একে এসব বিষয়ের উপর যতদূর সম্ভব সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো। ১। পাকিস্তান সৃষ্টির কারণ যুগের পর যুগ ধরে, রোমান এবং পারসিকদের চেয়ে অধিক বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার পরেও প্রায় হাজার বৎসর পূর্বে, পাক-ভারতের হিন্দু রাজন্যবর্গ বহিরাগত আরবী মুসলমানদের নিকট ধীরে ধীরে পরাজয়বরণ আরম্ভ করেন। পরাজিতদের অনেকেই পাহাড়ে-পর্বতে লুকিয়ে লুকিয়ে, স্বতন্ত্রভাবে, প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকেন। আরবদের পরে নানা জাতের মুসলমানেরা পাক-ভারতকে শাসন করে। মুসলিম শাসনামলের শেষের দিকে, মহর্ষি আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর, হিন্দু সমরশক্তি অনেকটা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আশ্চর্য্যের বিষয়, সুদীর্ঘ মুসলিম শাসনামলে পাক-ভারতের একটি লোকও, মুসলিম সমরশক্তির ভয়ে ভীত হয়ে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি। বরং-মুসলমান সুফী-দরবেশদের মাহত্যের ভয়ে ভীত হয়ে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি। বরং-মুসলমান সুফী-দরবেশদের মাহত্যের প্রভাবে, এদেশের অগণিত লোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় অংশ্র গ্রহণ করে। অধিকন্তু প্রায় হাজার বৎসর এদেশে বসবাস করার পর, বহিরাগত স্বল্পসংখ্যক মুসলমানদের প্রায় সকলেই তাদের অতীত ভুলে গিয়ে, এদেশের স্থায়ী অধিবাসীতে রূপান্তরিত হয়। আরব দেশের মুসলমানেরা যে রকম আরব পৌত্তলিকদের বংশধর, ইরান তথা পারস্যের মুসলমানেরা যে রকম পারসিক অগ্নিপূজকদের বংশধর, মিশরের মুসলমানেরা যে রকম ফেরাউন ও ইহুদিদের বংশধর, তদ্রুপ-আমরা পাক-ভারতের মুসলমানেরা এবং বিশেষ করিয়া বাংলাভাষী মুসলমানেরাও পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যজাতী হিন্দুদের আলোকপ্রাপ্ত বংশধর। পুঁথি-সাহিত্য এবং কিংবদন্তী হতে জানা যায়, পৃথিবীর প্রথম নর আদম তথা মনু এবং তার সাখী হাওয়া, বাংলাদেশের স্বরদীপ ও তার আশেপাশেই আবির্ভূত হন। পৃথিবীর লক্ষকোটি বৎসরের আবর্তন, বিবর্তন ও কম্পনের ফলে যে দ্বীপ ধ্বসে গিয়ে বর্তমানে ক্ষুদ্রাকৃতি সন্দীপে পরিণত হয়েছে।